Saturday, March 3, 2018

মাহাদী হাসান সুমন


তোমারে চিনি না আমি। মাহবুব মোর্শেদ এর নতুন উপন্যাস পড়া শেষ হলো গতরাত্রে। অনেকক্ষণ ঝিম মেরে বসে ছিলাম।

আমার বন্ধুকে মনে পড়ছিল। তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা। শিল্পী বলতে যে দু'চার জনকে কাছ থেকে চিনি, তাঁদের মধ্যে অন্যতম। রাজনীতির চেয়ে শিল্পই তাঁকে বেশি ভাবায়। এ প্রেম থেকে সে প্রেমে অস্থির ভ্রমরের মতো খুঁজে ফেরেন নিজেকে। কিন্তু জানি, বাঁধা পড়েছেন এই স্থবির সময়ের আবর্তে। মাঝে মাঝে খুব খুঁচিয়ে প্রশ্ন করি তাঁকে, 'যে অমিত সম্ভাবনা আপনি নিজের ভেতরে অনুভব করেন, আর কিছুদিনের মধ্যেই যদি প্রমাণিত হয়ে যায়, আপনি আসলে আর পাঁচজনের মতোই সাধারণ হয়ে গেছেন, কেমন লাগবে আপনার?'

উত্তর ফিরে আসে অসহায় হাসি হয়ে। যে জানে উত্তর, তার নাম কি সময়? এই সমকাল? না প্রেমিক না বিপ্লবী হয়ে থাকে যে জীবন, সে জীবনই কি আমার ? আমাদের? কিন্তু সেই অধ্যাবসায় কই? সমাজ পরিবর্তনের সেই সাহস কই?

ভাবনাটা নিজের দিকেও আসে। শাহাবাগে দাঁড়ানো আমি, ফেসবুকের সরব আমি, কৃষি ভূমির আমি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আমি, পরিবারের আমি, গভীর রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেটে অন্যমনস্ক টান দিতে থাকা আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, এই আমিই কি সেই আমি, যে শুধু কবিতাই লিখতে চেয়েছিল? ক্রমশ সে কোথায় হারিয়ে গেছে? কোন সময়ের অতল গর্ভে?

গতরাত্রে ভাবছিলাম, যদি রাস্তাতে এই উপন্যাসের চরিত্রটার সাথে দেখা হয়ে যায় কখনও আর সে যদি প্রশ্ন করে বসে, 'তুমি কি সুখী?' কি জবাব দিতে পারি এর।

কোন সমকালীন উপন্যাস খুব কাছাকাছি সময়ে নিজের ভেতরে এতো ভাবনা সৃষ্টি করতে পেরেছে, এমনটা আর হয়নি। এতো আদরের লেখা, এতো সুচিন্তিত শব্দ প্রয়োগ, এতো সাবলীলতা, যেন প্রকৃতি।

সময়টা ধরা পড়লো কারও কলমে, মানুষগুলো ধরা থাকলো লেখায়। ফাল্গুনের হাওয়া এক গভীর আশাবাদের মতো স্বস্তি সৃষ্টি করে গেল।

ফেসবুক 

No comments:

Post a Comment