Saturday, March 3, 2018

আরিফুজ্জামান তুহিনের চিঠি


‘তোমারে চিনি না আমি’
আমার গল্প, আমাদের গল্প আপনি কি করে জানলেন?
প্রিয় মাহবুব ভাই
সেই কবেকার কথা। তা আঠেরো বছরতো হবেই। মফস্বল শহরের ক্ষয়ে যাওয়া লাল ইটের রাস্তা ছেড়ে আমি একটা ব্যাগ নিয়ে ঈগল নামে ঢাকার একটি পরিবহনে উঠে গেলাম। পস্ট মনে আছে। শীতকাল ছিলো। মাঠে হলুদ শর্ষেফুলের মাতাল করা গন্ধ ছুটছিলো। জানালার পাশে বসে আমার তখন কেবলই মনে হচ্ছিলো, নবগঙ্গার ক্ষীণ ধারায় জলের গভীরে ডুব দিয়ে আমি যে মাছের নড়াচড়া দেখতাম, রায়দের বাগানে অসময় বড় হওয়া কাঠাল চুরি করে খেয়ে সেই কাঠালের ভুতি আবার রায়েদের বাড়িতেই রেখে আসতাম কিম্বা কৃষক সংগঠনের জন্য মাইলের পর মাইল ছুটতাম তা আর হবে না। আমি পুরনো কোন ট্রাঙ্কে নেফথোলিন দিয়ে রাখা মখমলের মত নরম কোন পোশাক, আর যাচ্ছি কাট কয়লার শহরে পড়তে যাওয়ার নামে পুড়তে, অঙ্গার হতে। ঠিক জানালার পাশে বসে আমি এই সত্য জেনে গিয়েছিলাম। অথচ আমি বস্তুত কোনদিন জজ ব্যারিস্টার হতে চাইনি। হতে চাইনি ডিসি এসপি। প্রায়শ ভাবতাম, আমি লালন সাইয়ের কোন মাজারের ফকির হলে ভালো হতো। আসলে আমি কবি হতে চেয়েছিলাম।
এরপর বহুদিন পরে যখন আমি জেনে গেলাম এই শহর, এই ঢাকা বিশ্রি শহরই নয় শুধু; একইসঙ্গে এটি সংঘবদ্ধ একটি ডাকাতদের আস্থানা। এখানে শুধু আ.লীগ বিএনপি জামাত জাতীয় পার্টি সিপিবি বাসদ ওয়ার্কার্স সার্কাসরাই ডাকাত নয়, এখানে ডিসি এসপি জজ ব্যারিস্টারদের বাইরেও ডাকাতদের সিন্ডিকেট আছে। কবি সাহ্যিতকেরাও এই শহরে এসে ডাকাত হয়ে যায়। ডাকাত রাজ্যের ডাকাত কবি। কিন্তু আমি এরকম হতে চাইনি।
বিশ^বিদ্যালয় পড়তে পড়তে বামপন্থি রাজনীতির সাথে যুক্ত হইনি। এরও আগে যখন আমার ভেতর আরেকটি আমার অস্তিত্ব জন্ম নিচ্ছিলো তখন থেকেই আমি বিপ্লব করতে চেয়েছিলাম। জীবনে দুটি জিনিষই চেয়েছিলাম বিপ্লব ও কবিতা। এই মধ্যবেলায় এসে দেখলাম কোনটিই হয়নি। এ শহরে বিপ্লবতো হয়ই না, কবিতাও নয়।
বিশ^বিদ্যালয়ে বামপন্থি আন্দোলনের কর্মী থেকে কখন নেতা হয়ে গেলাম জানি না। কিন্তু নেতা হওয়ারও বহু আগে একবার মন খারাপের দীর্ঘদিনে বাড়িতে গিয়ে বসেছিলাম। সেইসব সময় অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখতাম। দেখতাম, সারি সারি মানুষ আমাকে ডাকছে। তারা কোথায় যাচ্ছে কেউ জানে না। কিন্তু সেইসব অলিক মানুষের ডাকে আরো মানুষ তাদের পেছনে হাটছে। স্বপ্ন দেখে রাতে আর ঘুমাতে পারতাম না। আমাদের পুরানো ভাঙ্গা রাজবাড়ির সামনের মাঠে বাকি রাত হাটতাম।
এরকমই একদিন সময় সাব্বির মামা এলেন। মামা এ কারণে আমার বন্ধু বাদলের মামা তিনি। পুরুষ মানুষ দেখতে এতো সুন্দর হয় সাব্বির মামাকে না দেখলে বিশ্বাস হোত না। সাব্বির মামা যেনো আমার এই একাকি জীবনে বৈশাখের ঝড় হয়ে এলেন। পেশায় তিনি ডাক্তার। কিন্তু ডাক্তারি করতে তার ভাল লাগে না। তার ভাল লাগে কবিতা নিয়ে আলাপ করতে। লালন নিয়ে কথা বলতে। ভক্তিবাদ আর বস্তুবাদ নিয়ে তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে কাটিয়ে দিচ্ছিলেন। মনে হলো সময়গুলো যেনো হাওয়াই মিঠাইয়ের মত চলে যাচ্ছিলো।
আমাকে তিনি বলছিলেন, রাজনীতি আমার জায়গা না। যে ধারার রাজনীতি দেশে চলছে সেটি না করাই ভাল। বরং রাজনীতিতে আরো বেশি মানুষ আসতে পারে, মানুষ তার চিন্তা পদ্ধতিতে প্রশ্ন করা শিখতে পারে তা নিয়ে ভাবো। তুমি লেখো। বেশি বেশি করে লিখো। প্রেম অপ্রেম, যৌনতা, যা মনে আসে। মুক্ত মানুষের আকাঙ্খা যা হয় সেটিই প্রকাশ করো। বিশ^বিদ্যালয়ে ফিরে যাও। লিটল ম্যাগাজিন বের করো। অন্যদের পত্রিকায় লেখো। তুমি লিখে ভাসিয়ে দাও। তোমার লেখার মধ্যে একটা মায়া আছে, একটা যাদু আছে।
আমি তখন সাব্বির মামাকে বিপ্লব না করার অজুহাত হিসেবে এইসব লেখালেখির উপদেশ দিচ্ছেন এটি বলেছিলাম। চারু মজুমদার আর সিরাজ সিকদার থেকে কোট করে বলেছিলাম, এগুলো পাতি বুর্জোয়া মনোভাব। লেখালেখির বদলে বরং আমি সাব্বির মামাকে বলেছিলাম, কিভাবে প্রকাশ্য গণআন্দোলনের সঙ্গে সশস্ত্র সংগ্রামের মেলবন্ধন ঘটাতে হবে। কিভাবে আরবান গেরিলা ওয়ারজোন গড়ে তোলা যাবে। কি ধরনের কর্মসূচী নিলে ছাত্ররা শ্রমিক-কৃষকের সাথে লড়বে। পার্টি বাহিনী ফ্রন্ট কিভাবে কাজ করবে। একদম ছক একে খাতায় চিত্রকর্ম দিয়ে এসব বুঝিয়েছিলাম। সম্ভবত এসব বিষয়ে আমি দুইরাত সাব্বির মামার সাথে আলাপ করেছিলাম।
সেইসব আলাপ হয়েছিলো আমাদের নড়াইয়েলর লোহাগড়ার সেই পুরানো জমিদার বাড়িতে। আমার রুমের বাইরেই ছিলো বিশাল একটা শিউলি ফুল গাছ। মাঝরাতে সেখান থেকে গন্ধ ছুটতো। সাব্বির মামা চলে গেলেন। আমি ফের একা হয়ে পড়লাম। তার কিছুদিন পর ঢাকায় ফিরলাম। আবার আন্দোলন সংগ্রাম। কিন্তু এবার সত্যিই সত্যিই লিটল ম্যাগ বের করার চেষ্টা করেছিলাম। কাদামাটি নামে পত্রিকাটির একটি সংখ্যাও করেছিলাম। পত্রিকা বের হবার পর কোথা থেকে সাব্বির মামা এলেন মধুর ক্যান্টিনে। অনেক গল্প করলেন। বললেন, পত্রিকা করছি এটি ভাল খবর। অনেক উৎসাহ দিলেন। এ ঘটনার বহু পরে জেনেছি সাব্বির মামা হলেন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল লাল পতাকা) সাধারণ সম্পাদক ডা: মিজানুর রহমান টুটুল। র‌্যাব তাকে ঢাকা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে রাজশাহীতে ক্রসফায়ারে হত্যা করে। আর আমার বন্ধু বাদলেরও কোন খোজ নেই। ও হয়তো অনেক আগেই জমা খরচের খাতায় ওঠে গেছে।
আমিও এখন স্বপ্ন দেখি, প্রায় দেখি। এটি নিয়ে আমি যে পত্রিকায় কাজ করি সেখানে লিখেছিও, দেখি আমাকে মারার জন্য দীর্ঘ এক আরব দৌড়াচ্ছে। তার হাতে রুপালী তলোয়ার চাদের আলোয় পড়ে চকচক করছে। আমি মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করি। কিন্তু মরি না।
এর ব্যাখ্যা অনেকে করেছেন, যেহেতু আমি নাস্তিক ব্লগারের তালিকায় একদম প্রথম সারির, সে কারণেই ভাবি আমি নিহত হবো। কিন্তু আমিতো এভাবে ঘাতকের হাতে মরতে পারি না। এটা আমার কবিতার দিব্যি। বহুকাল আগে একবার আমি লিখেছিলাম, ‘আমার দেহ গিলে নিবে কোন ট্রেন অথবা তোমার দেহ’
হয় আত্মহত্যা করবো না হয় ভালোবেসে তীব্র যন্ত্রণায় মরতে চাই। ঘাতকের হাতেতো মরবো না আমি। আমি কেন এ স্বপ্ন দেখি? আর বিশ্বাসী আস্তিকেরা কেন আমায় মারবে? আমিতো কোনদিন আল্লাহ খোদা নবী রাসুল নিয়ে কোন কুটক্তীতো দুরে থাক কোন কথাই লিখিনি। তাহলে আমার নাম কেন এ তালিকায়? আমি নাস্তিক কিনা তা জানি না। কারণ নাস্তিক আস্তিকতার এসব বিষয়গুলো আমার কখনই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি।
নাস্তিকের তালিকায় নাম ওঠায় অনেকের জাত বেড়েছে। অনেকে আবার জীবনের ঝুকি নিয়ে দেশের বাইরে পাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু আমি ভাবতাম এখনো ভাবি, আমি এভাবে মারা যাবো না। আমিও বাইরে যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো?
আমিও থাকি মিতালির রোডের মাথায়। ধানমন্ডি ১৫ নম্বর দিয়ে যেতে যেতে পেপার স্টান্ডগুলোতে আমিও চোখ বোলাই। এই গল্প কী তবে আমার? আমিতো লিখি না বহুদিন। শেষ যেবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। নানান ঘটনায় সেটি একটা বিমবিষার মত হয়ে দাড়ালো তখন একটা সুইসাইড নোট লিখেছিলাম। সেটি কবির মৃত্যু বিষয়ক ভাবনা হিসেবে আমার পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক মাসুদ ভাই ছেপে দিয়েছিলেন। এই শেষ লেখা। একটা গল্প, কয়েকটা কবিতা আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু লেখা কোথায় কোথায় ছাপা হইছে তার কোন কিছুই আমার কাছে নেই। আমি এসব সংগ্রহে রাখি না। সব মিলিয়ে উপন্যাসের ৪০ পাতা লিখে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আর বের হয়নি মাথা থেকে। মনে হোত ছাইপাস লিখে কি হবে? তাহলে এই যে উপন্যাস, তা কি আমাকে লক্ষ্য করে? নাকি আমার মত যাদের স্বপ্ন ছিলো কবি হওয়ার, বিপ্লবী হওয়ার বিপ্লব করার কিম্বা জীবনে কিছু একটা করার তাদের সবার গল্প?
এইসব সিদ্ধান্ত না হয় অন্যকোন সময় নিবো। বা নেবারও যে খুব একটা দরকার আছে তা বলছি না। কিন্তু এই উপন্যাস, এই গল্প আমাকে মাতালের মত টেনে নিয়ে গেছে আমার ৩৭ বছরের জীবনে। অনেক কিছু হতে চেয়ে আমি এখন সাংবাদিকতা করি। ক্রমশ দীর্ঘদেহী সাহসী একটা মানুষ পরিণত হয়েছি আরশোলায়। আর কত আপোষ করবো?
এই গল্প আসলে অনেকগুলো স্বপ্ন ক্রসফায়ার হওয়ার গল্প। সরদার মামার ক্রসফায়ারের মধ্য দিয়ে পাঠক সেই স্বপ্নগুলো নাই হয়ে যাওয়ার বিষয় ধরতে পারে। এই গল্পটি বলার জন্য আপনি পাঠককে বসিয়ে রেখেছেন। একটি ঘোর তৈরী করে, একটি চক্রব্যুহো তৈরী পাঠককে সেখানে ফেলে দিয়ে আপনি নিজেও কস্ট পাচ্ছেন। আমি এরকম সক্রিয় লেখক চাই। যিনি পাঠকের সাথেই কস্ট পান।
এই গল্প আমার গল্প, আমাদের মত মানুষের গল্প। এই গল্প আমার চেনা জীবনের গল্প। যৌথখামারগুলো ক্রসফায়ারের গল্প। সারারাত ধরে গল্প পড়ে মাথা এলো মেলো হয়ে আছে। সে কারণে আপনাকে এই এলো মেলো চিঠি লিখলাম। বহুকাল চিঠি লিখি না। চিঠি লেখার মত কেউ আর বেচে নেই। যাদের লিখতাম তারা কেউ ক্রসফায়ারে না হয় নিজেই মরে গেছে।
আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই, সে কারণেই আপনাকে মেইল দিলাম।
ভাল থাকবেন।
শুভেচ্ছাসহ
আরিফুজ্জামান তুহিন

রাফসান গালিব

প্রিয় কথাশিল্পী মাহবুব মোর্শেদ ভাইয়ের উপন্যাস -তোমারে চিনি না আমি। দীর্ঘদিন পর মাহবুব ভাইয়ের উপন্যাস পাইল পাঠক।
ঢাকাতে এসে তার হাত ধরে সাংবাদিকতায় যাত্রা। আগ থেকেই চিনতাম এ অমায়িক ভদ্রলোকরে। সাংবাদিক হিসেবে চিনতাম না, পরে তো তারে বস হিসেবেই পাইলাম। নতুন পাণ্ডুলিপি হাজিরানায় অভিনন্দন তারে।
এই অসাধারণ ঊপন্যাসিকের বইখানা আমি নিতেছি মেলা থেকে, আপনিও নিতে ভুইলেন না।
প্রকাশক আদর্শ। স্টল ৩২৬, ৩২৭, ৩২৮।

তোমারে চিনি না আমি নিয়ে সব খবরের লিঙ্ক

সাখাওয়াত টিপু

গত কয়েক দিন ধরে ম্যাক্সিম গোর্কির নানা প্রবন্ধ পড়ছিলাম। পড়তে পড়তে মনে হল, গোর্কি রাজনৈতিক দর্শনের বেলায় খুব অস্থির প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। কিন্তু মৌলিক সৃষ্টিশীলতায় দার্ঢ্য মননের। আরো মনে হলো, আমি প্রবন্ধ যত দ্রুত পড়তে পারি, কবিতা/গল্প/ উপন্যাস তত দ্রুত পড়তে পারি না। ফলে সময় লাগে। সময় দিয়ে পড়া লাগে। ম্যাক্সিম গোর্কির শেষকৃত্যের একটা ছবি মাথা থেকে কোন ভাবে ফেলতে পারছি না ক'দিন ধরে।। সেটা হলো- গোর্কির কফিন বহন করছিলেন সেই দেশের রাষ্ট্র প্রধান জোসেফ স্তালিন। দুনিয়ায় এমন সৌভাগ্যবান লেখক নেই বললেই চলে, যাদের কফিন খোদ রাষ্ট্র প্রধান বহন করেছেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশি লেখকদের ৩ খানা বই উল্টিয়ে দেখার সুযোগ হয়েছিল। বই ৩টি হলো আবদুল করিম/ মুহাম্মদ এনামুল হকের ' আরাকান রাজসভার বাঙ্গালা সাহিত্য', নূরুল কবীরের 'কথকতা' ও মাহবুব মোর্শেদের ' তোমাকে চিনি না আমি'। প্রথম বইটি ঐতিহাসিক। নানা কারণেই। কারণ সপ্তদশ শতাব্দীতে আরাকানে মুসলমানের হাতে বাংলা সাহিত্যের বিকাশ হয়। মজার ব্যাপার হলো- আরাকানী সাহিত্যের ধরন বৈষ্ণব সাহিত্যের ন্যায়। পদাবলীর মতো পদ-বিন্যাস, সহজ ভাব আর গীতলতার লালিত্যে ভরা। বইটি দৌলত কাজী থেকে দোনা গাজীর একটা সজল রূপ। বইটি পড়ে আনন্দ পেয়েছি বেশ।

চিন্তাবিৎ নূরুল কবীর আমার পছন্দের মানুষ। স্পষ্টভাষী বলে ওনার খ্যাতি বিস্তর। যাক সে কথা! কবীর ভাই 'কথকতা' বইটা উপহার দিয়েছেন। এটি বিভিন্ন সময় নানাজনকে দেয়া সাক্ষাৎকারের একটা সংকলন। মূলত সাক্ষাৎকারে তিনটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। যথা- মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও বুদ্ধিজীবীতা। স্বাধীন রাষ্ট্র জন্মাবার পর আমাদের দেশে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ খুব বেশি হয়েছে বলে মনে হয় না। স্বাধীন দেশে বুদ্ধিজীবীতার দিশা সাহিত্যিক/অধ্যাপক/ সাংবাদিকরাই দিয়েছেন। কিন্তু আস্তে আস্তে সেটা চলে যায় আমলাতন্ত্র আর এনজিও কর্মকর্তাদের হাতে। সে এক দুখুমাখানো সুশীল সংবাদ! সেটা অন্যকথা! কিন্তু নূরুল কবীরের বইটা নিয়ে কোথাও কোন আলোচলা-সমালোচনা দেখলাম না। নীরবতা দিয়ে জ্ঞানকে কখনো ঢেকে রাখা যায় না। এটা নিশ্চয়ই বুঝদাররা বুঝবেন।

মাহবুব মোর্শেদ আমার অনুজ-বন্ধু। সেদিন আমাদের আরেক বন্ধু বললেন, মাহবুব আপনাকে নিয়ে এমন সমালোচনা করেছেন, তারপরও দেখি আপনি তাকে পছন্দ করেন! বললাম, সাহিত্যের আনন্দটা নেন। সাহিত্য সাহিত্যই। তার দ্বিতীয় উপন্যাস 'তোমারে চিনি না আমি' প্রকাশিত হয়েছে। বইটাও মাহবুব উপহার দিয়েছে। দ্বিতীয় উপন্যাসে সে খানিক ফেলে আসা দিনগুলোতে থিতু হয়েছে। উপন্যাসে আছে নায়কের স্বপ্ন আর বাস্তবের ফারাক। মূলত আড়ালের এক রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা। সেটা একটা সময়কালের। আর বেশি বলব না। তার ভাষা সহজ, সরল নয়। যা ভাবকে ধারণ করতে পারে। আনন্দদায়ক ব্যাপার।
সবাইকে শুভেচ্ছা।
#সাখাওয়াত_টিপু
ইন্দিরা রোড, ঢাকা
ফেসবুক 

কামরুজ্জামান কামু

এই বইটা নাকি রকমারি থেকে খুব বিক্রি হচ্ছে। শুনে আমি উৎসাহী হয়ে বইটা বাসায় নিয়ে আসছি। বেশ কয়েক বছর আগে মাহবুব মোর্শেদ-এর প্রথম উপন্যাস 'ফেস বাই ফেস' পড়ে মুগ্ধ হইছিলাম। সে সময় ইন্টারনেট এতো বিস্তার লাভ করে নাই। সমাজ, রাজনীতি, জীবন ও সম্পর্কের সপ্রতিভ, রসাত্মক ও সংবেদনশীল ভাষ্য রচনার শক্তি তাঁর আছে। আছে সহজ ভাষায় অন্তরলোক উন্মোচনের ক্ষমতা। পড়তে শুরু করলে পাঠককে ধরে রাখার দায়িত্ব নিয়ে নেয় তাঁর গতিময় ভাষা। এই লোকের সাহিত্য যদি বাজারে বেস্টসেলার হয়, তাহলে বলতে হবে পাঠক সমাজ কিঞ্চিৎ দুষ্টু হইয়া উঠতেছেন। জয় হো মামো! বাকিটা পইড়া লই।

কৃতজ্ঞতা : মাহবুব মোর্শেদ


'তোমারে চিনি না আমি' উপন্যাসের প্রথম খসড়া তৈরি করে রাজশাহী যেতে হয়েছিল। কাহিনির বড় একটা অংশ রাজশাহীতে বিশেষত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে। পুরনো জায়গাগুলো নতুন করে দেখার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু কেউই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কথাটা।
একি সিনেমা নাকি যে স্পট দেখতে যেতে হবে। জিজ্ঞেস করছিল রাজশাহীতে আসলে কী কাজ। মজার ব্যাপার, রাজশাহীর বন্ধুরা কথাটা বিশ্বাস করলেন। Salim Reza Newton, Ullash Habib Zakaria, সৈকত আরেফিন, রহমান রাজু দারুণ সহযোগিতা করলেন। যা যা মেলানোর দরকার ছিল তা তা ঠিকঠাক মেলাতে পারলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতের আগমনী দিনগুলো সত্যি দারুণ ছিল। আহা বসন্তেও যদি যাওয়া যেত। কথা হয়েছে Nusrat Sharmin, Mahbuba Chhaya, স্মৃতি রুমানা, A-Al Mamun এর সাথে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার করাই হয়নি। কবি জুয়েল মুস্তাফিজও অনেক সহযোগিতা করেছেন। সবাইকে ধন্যবাদ। পরের উপন্যাসের কাজ তো আগেই শুরু করেছি। বন্ধুরা পাশে না থাকলে লেখা সবসময়ই কঠিন।

Sadikur Rahman

“Tomary Chini Na Ami” is now in my hand. The novel by Mahbub Morshed keeps me waiting for last 10 days. I was very much eager to get it in very first day of its publication but was not able to visit Book Fair. So I have to take alternative route –Rokomai.com. I placed a preorder to Rokomari on February 1 and they delivered it to me today after repeated push.
Special thanks to Mahbub vai for giving us a novel after a long (readers aspect) interval and expecting more in coming days with reduced break.
Thanks Rakomari.com.

হাবিব জাকারিয়া উল্লাস


আবেগে বন্ধুর বইয়ের বিজ্ঞাপন করি...কারণ...অকারণ জানা নাই৷ মেয়ে দেখেছিল এক চাচ্চু একটা বড় গল্প বলবে বলে রাজশাহী এসেছিলো৷ তারপর একটা বইয়ে গল্পটা বলে ফেললো৷ কি অদ্ভুত কান্ড....

নির্ঝর ঢাকা

মাহবুব মোর্শেদ সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত কিন্তু উপন্যাস লেখক হিসেবে আমার কাছে একেবারেই নতুন । আশা করছি আমার খারাপ লাগবে না ।
মাহবুব ভাই উৎসর্গ টা ভালো লাগছে - স্বর্গের উজ্জল নদী ।

আবু মুস্তাফিজ হাসান

লোকমুখে শুনেছি বইটা অনেক সুখময় পাঠ্য, ভিতরে নানাবিধ তৈযজপত্রও আছে। ফলে আপনিও একটি কিনুন, আমি তো কিনবই।
ফেসবুক 

নতুন ছন্দে পুরনো মাহবুব : ইলিয়াস কমল

বইমেলা শুরু হয়ে গেলে প্রথমত যেটা হয়, ধুমধাম পছন্দের বই কেনা হয়। তারপর ধীরে ধীরে পড়া হয় সারা বছর। এছাড়া কোনো বই নিয়ে একটু বেশি আগ্রহ বা ভালোবাসা থাকলে একই সাথে আরো দশটা বই কেনা হলেও পড়া হয়ে যায় ফেব্রুয়ারিতেই। তবে এমন বই সাধারণত প্রতি বছর মেলার সময় খুব কম থাকে। এক-দুই থেকে তিনটার বেশি হয় না। আর তাই সারা বছর ধীরে ধীরে পড়ার জন্য সময় পাওয়া যায়। তো মেলা চলাকালীন বই পড়ে ফেলার মতো আগ্রহী বই এবার একাধিক আসছে। তার মধ্যে মাহবুব মোর্শেদের দ্বিতীয় উপন্যাস (এমনিতে তৃতীয়, কিন্তু দ্বিতীয় উপন্যাস হিসেবে যেটা ছিলো ‘অর্ধেক জাগ্রত রেখে’-কে লেখক নিজে নভেলা বলেন বলে) ‘তোমারে চিনি না আমি’।
আগে থেকেই জানতাম প্রথম সপ্তাহেই আসবে। প্রথম দুই দিন মেলায় গেলেও বই কেনা হয়নি। তৃতীয় দিন গিয়ে বই কিনতে গিয়ে দেখি পকেটে টাকা নাই। সাথে আরো এক বন্ধু থাকায় তার কাছ থেকে ধার নিয়ে বই কেনা হলো। ভাবছিলাম বাসে বসে কিছুটা পড়ে ফেলবো। কিন্তু সে সুযোগ না পাওয়ায় রাতে বাসায় গিয়ে পড়া শুরু হলো। ওই রাতে শেষ হয়নি। শেষ হলো ৩ তারিখ রাতে। এর আগে সাথে যে বন্ধু এই বই কিনেছে, সে ফোন দিলো রাত ৮টা বা সাড়ে ৮টার দিকে। জিজ্ঞাসা করলো বই শেষ করে ফেলেছি কিনা। বললাম, প্রায় শেষ। আজ রাতে শেষ হয়ে যাবে। বললো, তাকে চটি লিখার বুদ্ধি কে দিয়েছে?
আমি রীতিমতো ধাক্কা খেলাম। মানে? এটা চটি কেন? তখন তাকে একটু ফ্ল্যাশব্যাক-এ যেতে বললাম। জিজ্ঞাসা করলাম তার লেখা আগে পড়েছিস? তার লেখা সম্পর্কে কোনো আইডিয়া থাকলে তো তুই এমন মন্তব্য করতি না? তখন সে জানালো লেখকের প্রথম গল্পসংকলনটি ‘ব্যক্তিগত বসন্তদিন’ পড়ছিলো। বললাম ওই বই ঠিকমতো পড়লেও এমন মন্তব্য করার কথা না। যাই হোক, আমি তার সাথে আর তর্কে যাই নি। বলেছি, বই শেষ করি তারপর মন্তব্য।

তিন তারিখ রাতে বই শেষ করার পর আমার ‘ব্যক্তিগত বসন্তদিন’ এর মাহবুব মোর্শেদকেই মনে পড়ছে। ওই গল্প সংকলনের যে গল্প পড়ে আমি মাহবুবের গল্প/গদ্যের ভক্ত হই, সেটার নাম ‘জিসম’। হিন্দি সিনেমার নামে ওই নাম থাকায় সেসময় গল্পটি সমালোচিত হয়েছিলো। আরো সমালোচিত ও আলোচিত হয়েছিলো গল্পের মধ্যে তীব্র যৌনতার প্রসঙ্গ। এখান থেকেই যে মাহবুব আলাদা হয়ে উঠছেন এটা তার সচেতন পাঠকরা খেয়াল করছেন কিনা জানি না, আমি খেয়াল করছি এই গল্পকার এই দিকেই যেতে চাচ্ছেন। পরবর্তীতে তার একটি গল্পগ্রন্থও   প্রকাশিত হয়েছিলো ‘দেহ’ শিরোনামে। ওই গল্পগুলোর যোগসূত্রও ছিলো শরীর ও যৌনতা। বাংলাদেশের মত সেমি-আধুনিক ও সেমি-ধার্মিক মধ্যবিত্তের জীবনের যৌনতার গল্প। একই রকম চিত্রও মাহবুবের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘তোমারে চিনি না আমি’-তে।
হ্যা, গল্পে যৌনতা থাকায় অনেকে বিরক্ত হতে পারেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই উপন্যাস কিন্তু যৌনতার না। এই উপন্যাস ভয়াবহ রকম রাজনৈতিক ও সামাজিক। পাঠককে কেবল সেই সমাজটা মাহবুবের চোখ দিয়ে দেখতে হবে। তার নির্মিত চরিত্রের মধ্য দিয়ে দেখতে হবে। এই দেখতে পারলেই আপনি মাহবুবকে অন্তরঙ্গভাবে চিনতে পারবেন। না হলে সে আপনার বিরক্তির কারণও হতে পারে। যেমন ভারতের এক সময়কার জনপ্রিয় লেখক খুশবন্ত সিং এর বই পড়ে কেউ আনন্দিত হয়, কেউ হয় বিব্রত ও বিরক্ত। আমি অবশ্য আনন্দের ভাগিদারই হই। তাই আমার কাছে মাহবুব মোর্শেদের বই মানেই আমার কাছে সমাজের আরো একটি নতুন রূপ। আরো একটি নতুন অভিজ্ঞতা।
চ্যানেল আই অনলাইন

শেরিফ আল সায়ার

মাহবুব মোর্শেদের ‘তোমারে চিনি না আমি’ উপন্যাস পড়া শেষ। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রানা। এই চরিত্রের বর্ণনায় পাঠক তাকে লম্পট, যৌন আকাঙ্ক্ষায় বিকারগ্রস্ত হিসেবেই আবিষ্কার করবে। প্রশ্ন আসতে পারে রানা কেন প্রধান চরিত্র? লম্পট চরিত্রহীন কিভাবে নায়ক হয়ে ওঠে উপন্যাসের? এমন প্রশ্নে ঘুরপাক খেতেই পারে পাঠক।
উপন্যাস কোনও নির্দিষ্ট গল্প ধরে এগোয় না। এমনকি পাঠক যখন উপন্যাস পড়া শুরু করবে তখন দেখা যাবে সব কিছু যেন দ্রুত ঘটে যাচ্ছে। পরিবার বিচ্ছিন্ন নি:সঙ্গ রানার দ্রুত বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, সংসার ধর্মে চলে যাচ্ছে। তার পরিবারের সঙ্গে যেই দূরত্ব তৈরি হয়েছিল সেই দূরত্বও ঘুচে যাচ্ছে। তাহলে লেখক কোন দিকে চলবেন রানাকে নিয়ে?
পরে ধীরে ধীরে দেখা যাবে রানার যৌনতাকেই যেন প্রাধান্য দিচ্ছেন লেখক। একে একে হাজির হবে নারী চরিত্রগুলো। নারী চরিত্রগুলোর মধ্যে আছে- নুরুন্নাহার, লুৎফুন্নাহার, পপি, রোজ, মিথিলা। সবার প্রতিই তার যে আকাঙ্ক্ষা, প্রেম খোঁজার যে তীব্র বাসনা সেখানে যৌনতাই যেন বড় ভূমিকা রাখে। মাহবুব মোর্শেদের এই উপন্যাস আমাকে মনে করিয়ে দেয় সৈয়দ শামসুল হকের ‘খেলারাম খেলে যা’ উপন্যাসকে।
যাইহোক, এই উপন্যাসে আছে কবিতার সঙ্গে বোঝাপড়া। আছে এক লম্পট যুবক কবিতাকে ভালোবেসে হঠাৎ করে কিভাবে জড়িয়ে পড়ে রাজনীতিতে। সেখানেও সে ব্যর্থ হয়। এমনই দিকভ্রান্ত এক যুবকের কথনে তৈরি হয়েছে ‘তোমারে চিনি না আমি’।
প্রধান চরিত্র রানা একা হয়েও একা চলতে যেন পারে না। তার এগিয়ে যাওয়ায় ক্রমাগত প্রয়োজন পড়ে অন্যের কু-পরামর্শের। কেউ তাকে ব্যবহার করে, কখনও সে কাউকে ব্যবহার করে। হয়তো বা রানা সেচ্ছায় তাদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। যেমন, কামরুজ্জামান, দীপক, সরদার ক্রমাগত রানাকে ধাবিত করেছে এক বিচ্ছিন্ন জগতে। সবাইকে আপন মনে হয় রানার। কিন্তু আদতে কেউই কারও আপন নয়, সময়ের বাস্তবতায় সেটাই প্রমাণিত হয়। যদিও সবশেষ গুরু সরদার তাকে ঠিক কোন দিশা দিতে চেয়েছিল এ এক অস্পষ্ট বয়ান হিসেবেই উপন্যাসে থেকে যাবে।
স্মৃতির ভেতর ঢুকে চরিত্রটি যখন তাকে আবিষ্কারের চেষ্টা করতে থাকে– তখন বোঝা মুশকিল কোথায় যাবে রানা? কিংবা সে কোথায় যেতে চায়, কিংবা লেখক মাহবুব মোর্শেদ রানাকে কিভাবে হাজির করতে চায়? এমন প্রশ্ন থেকেই যাবে পাঠকের মনে।
এই উপন্যাসের সবচেয়ে বড় মন্দ দিক হলো, একটি পজিটিভ চরিত্র হাজির হয়নি। যদিও রানার স্ত্রী নাজনীনকে কিছুটা মন্দ কথার বাইরে রেখেছেন লেখক। কিন্তু এই চরিত্রটি প্রকাশিত হয়নি।
‘তোমারে চিনি না আমি’ উপন্যাস। মাহবুব মোর্শেদের প্রথম উপন্যাস ‘ফেস বাই ফেস’। বলতে হয়, প্রথম উপন্যাসের মাহবুব মোর্শেদ এখানে অন্যরকম। ‘ফেস বাই ফেস’ পড়ে রোমাঞ্চিত হয়েছিল পাঠক কিন্তু উল্টোটাই হবে 'তোমারে চিনি না আমি' উপন্যাসে।
ফেসবুক লিঙ্ক 

সাদাত হোসাইন


মেলায় যাওয়ার কথা ছিল না, তারপরও কুড়ি পঁচিশ মিনিটের জন্য গিয়েছিলাম, প্রিয় কিছু লেখকের বই কেনার জন্য। মাহবুব মোর্শেদ ভাইয়া, সেই প্রিয়'র তালিকায় উপরের দিকেই আছেন। তার বই কিনতে গিয়ে কথা হলো Shakhawat Tipu ভাইয়ার সাথে। মাত্র কয়েক মিনিটের বাক্যবিনিময়। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে, এ এক দীর্ঘ গল্পের শুরু! ওইটুকু সময় নানাকারণেই মন ভালো করে দেয়ার। তবে সবচেয়ে বেশি মন ভালো হয়ে গেলো Mahbub Morshed ভাইয়া অটোগ্রাফে যা লিখে দিয়েছেন, সেই কথা ক'টি পড়ে! ভালোবাসা। আমরা পরস্পরের ছায়ায় হেঁটে যাবো দহনের মরুপথ, স্বপ্নের সীমানায়।

মাহাদী হাসান সুমন


তোমারে চিনি না আমি। মাহবুব মোর্শেদ এর নতুন উপন্যাস পড়া শেষ হলো গতরাত্রে। অনেকক্ষণ ঝিম মেরে বসে ছিলাম।

আমার বন্ধুকে মনে পড়ছিল। তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা। শিল্পী বলতে যে দু'চার জনকে কাছ থেকে চিনি, তাঁদের মধ্যে অন্যতম। রাজনীতির চেয়ে শিল্পই তাঁকে বেশি ভাবায়। এ প্রেম থেকে সে প্রেমে অস্থির ভ্রমরের মতো খুঁজে ফেরেন নিজেকে। কিন্তু জানি, বাঁধা পড়েছেন এই স্থবির সময়ের আবর্তে। মাঝে মাঝে খুব খুঁচিয়ে প্রশ্ন করি তাঁকে, 'যে অমিত সম্ভাবনা আপনি নিজের ভেতরে অনুভব করেন, আর কিছুদিনের মধ্যেই যদি প্রমাণিত হয়ে যায়, আপনি আসলে আর পাঁচজনের মতোই সাধারণ হয়ে গেছেন, কেমন লাগবে আপনার?'

উত্তর ফিরে আসে অসহায় হাসি হয়ে। যে জানে উত্তর, তার নাম কি সময়? এই সমকাল? না প্রেমিক না বিপ্লবী হয়ে থাকে যে জীবন, সে জীবনই কি আমার ? আমাদের? কিন্তু সেই অধ্যাবসায় কই? সমাজ পরিবর্তনের সেই সাহস কই?

ভাবনাটা নিজের দিকেও আসে। শাহাবাগে দাঁড়ানো আমি, ফেসবুকের সরব আমি, কৃষি ভূমির আমি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আমি, পরিবারের আমি, গভীর রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেটে অন্যমনস্ক টান দিতে থাকা আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, এই আমিই কি সেই আমি, যে শুধু কবিতাই লিখতে চেয়েছিল? ক্রমশ সে কোথায় হারিয়ে গেছে? কোন সময়ের অতল গর্ভে?

গতরাত্রে ভাবছিলাম, যদি রাস্তাতে এই উপন্যাসের চরিত্রটার সাথে দেখা হয়ে যায় কখনও আর সে যদি প্রশ্ন করে বসে, 'তুমি কি সুখী?' কি জবাব দিতে পারি এর।

কোন সমকালীন উপন্যাস খুব কাছাকাছি সময়ে নিজের ভেতরে এতো ভাবনা সৃষ্টি করতে পেরেছে, এমনটা আর হয়নি। এতো আদরের লেখা, এতো সুচিন্তিত শব্দ প্রয়োগ, এতো সাবলীলতা, যেন প্রকৃতি।

সময়টা ধরা পড়লো কারও কলমে, মানুষগুলো ধরা থাকলো লেখায়। ফাল্গুনের হাওয়া এক গভীর আশাবাদের মতো স্বস্তি সৃষ্টি করে গেল।

ফেসবুক 

নাজমুল হাসান সাগর




তুহিন ভাই এর চিঠিটা পড়ার পরে থেকে বইটা পড়ার জন্যে অস্থির হয়ে ছিলাম।দিনাজপুর থেকে এসেই বিকেলে মেলা গিয়েছি। লেখক মাহবুব মোর্শেদ ভাই এর থেকে স্টল নম্বর জেনে সরাসরি স্টলে গিয়ে কিনে ফেললাম।গিয়ে বলার সাথে সাথে মিষ্টি হাসি দিয়ে সেলসম্যান বইটা হাতে ধরিয়ে দিলেন।

খবর নিয়েছি,ভালোই বিক্রি হচ্ছে বইটা। চাইলে আপনারাও সংগ্রহ করতে পারবেন ৩২৬,৩২৭ ও ৩২৮ নম্বর স্টল থেকে।

Friday, March 2, 2018

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী


বাংলা বইয়ের মধ্যে সম্প্রতি পড়েছি মোশাহিদা সুলতানা ঋতুর উপন্যাস ‘লবণ পানি’। ভীষণ মুগ্ধ হয়েছি। তাঁর নতুন লেখা খুঁজছি। শুনেছি বইমেলায় তাঁর গল্পগ্রন্থ ‘বড় শহরের ছোটগল্প’ এসেছে। যত দ্রুত সম্ভব পড়া শুরু করব। এ ছাড়া আনিসুল হকের ‘আলো-আঁধারের যাত্রী’, মাহবুব মোর্শেদের ‘তোমারে চিনি না আমি’, কিঙ্কর আহসানের ‘রাজতন্ত্র’ পড়তে চাই। পড়তে চাই সাদাত হোসাইনের বইও। প্রবীণ-নবীনদের বই মিলেমিশে পড়ি আমি। বেশ কিছু কবিতার বইয়ের তালিকাও করেছি। সেগুলোও সংগ্রহ করতে হবে।
কালের কণ্ঠ 

লুত্‌ফর রহমান পাশা


সকাল বেলা মোটর সাইকেল সার্ভিসিং দিলাম। বাসা থেকে আসার সময় মাহবুব মোর্শেদের তোমারে চিনি না আমি উপন্যাসটা নিয়া আসলাম। ভাবলাম মোটর সাইকেল সার্ভিসিং চলবে আমিও উপন্যাসটা শেষ করে ফেলবো।

কিছুক্ষন পর জানলাম মোটর সাইকেল কাজ শেষ হতে সিরিয়ালে ৪টা বাজবে। ততক্ষণে ২৯ পৃষ্টা পর্যন্ত পড়েছি। অফিসে চলে এলাম। এগারটার দিকে গ্যরেজ থেকে ফোন দিলো আমি মোটর সাইকেল তালা দিয়ে চাবি নিয়ে চলে এসেছি। এরপর ১টার দিকে আবার গেলাম।

এবার তাদেরকে চাবি দিয়ে লাঞ্চ শেষে আবারও পড়তে শুরু করলাম। শেষের দিকে এসে বাইক সার্ভিসিং শেষ। তাদের অফিস বন্ধ হওয়ার সময়। আমার হাতে আর ১২/১৩ পৃষ্টা বাকী। দুই তিনবার আমারে ডাকলো শোনেও না শোনার ভান করে পড়তেছি। ম্যনাজার বললো আস্তে আস্তে সব গোছাও উনার পড়া শেষ হোক। একবার বললো বাইক ট্রায়াল দেন। আমি বললাম তোমি ট্রায়াল দিয়ে আসো আমি কাজটা শেষ করি।

মাহবুব মোর্শেদের গল্পের প্রতি আকর্ষণ জন্মেছে সর্পরাজের গল্প, রুখসানার হাসবেন্ড, দেহ এই গল্প গুলো পর থেকেই। গল্প টানে সামনের দিকে। তাই বলে এতো বড়ো উপন্যাস লিখতে হবে। তবে তারপরও ২০৮ পৃষ্টার উপন্যাস শেষ করলাম কোন প্রকার বিরক্তি ছাড়াই। অনেক দিন পর কোন উপন্যাস একটানা শেষ করলাম।

বইটার শেষ পর্যন্ত পড়া উচিত। প্রথম দিকে রানা কে যা মনে হয় শেষটায় তা নয়। এটা জানতে হলে বইটা পড়তে হবে। রিভিউ লিখবো, ইচ্ছা আছে। আপাতত তোমারে চিনি না আমি পড়তে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা জানালাম মাত্র।

ফেসবুক 

নিগার সুলতানা



তোমারে চিনি না আমি উপন্যাসটা পড়লাম। কেমন যেন স্থবির হয়ে গেলাম, ভারী হয়ে গেলাম। মনে হলো খুব ভাল একটা বই পড়লাম। ঘটনাগুলো খুবই সুন্দরভাবে সাজানো, জীবনের মতোই।
facebook 

আফজাল হোসেন


এবারের বইমেলায় আসা নতুন বই "তোমারে চিনিনা আমি" লেখক - মাহবুব মোর্শেদ Mahbub Morshed
পিছিয়া থাকা অর্থনীতির বিকলাঙ্গ মননে জোরেশোরে ধাক্কা দিয়েছে বইটির আলাপন।
কবিতা, লালন, রাজনীতি, আন্দোলন, প্রেম/ ভালবাসার তালাশে যৌনতার সাবলীল চলন, প্রেমহীন দেহের যৌন দৌরাত্ম্য, পারিবারিক সম্পর্ক থেকে আড়াল হওয়া, অস্থায়ী সম্পর্কের হাহাকার মোচড়াতে থাকে অনবরত। সব হারিয়ে প্রধান চরিত্র রানা প্রাণহীন সংসার জীবন টেনে নিয়ে যাচ্ছেন ঠিকানাহীন পথে। রহস্যগাঁথা সরদার চরিত্র মাঝেমাঝে চমক লাগায়। লেখকের বিষয়বস্তু নির্ধারণের সাহস, নতুন ভাবনার রসদ জোগায়।
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ লড়াকু চরিত্র নির্মাণে অনীহা দেখেছি লেখকের মধ্যে। উপন্যাসের জমিন রাজশাহী শহর, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে আমার উদ্দাম যৌবনের পাণ্ডুলিপি ধুসর হয়ে আছে, সেকারণে বইটি পড়ার সময় গলা শুকিয়ে আসছিলো মাঝে মাঝে, মনে হচ্ছিল অতীতকে বর্তমানে হাজির করে সেই চেনাপথে পা ফেলছি আবার। ভাল্লাগছে ঝরঝরে সরল শব্দপ্রয়োগে উপন্যাসের গাঁথুনি। এক দশকের মধ্যে আমার এই প্রথম প্রায় একরাতে পড়ে ফেলা উপন্যাস "তোমারে চিনিনা আমি"। প্রতিশ্রুতির সম্পর্ক থেকে সরে যাওয়া বিশ্ব মানব মননের সরব উপস্থিতির ছাপ এখানে লক্ষণীয়। পাঠককে দৌড়ের উপর রাখার ক্ষমতা আছে লেখকের।
আরো আরো নতুন লেখা পাবার প্রত্যাশা করছি এই লেখকের-----

রেডিও সাক্ষাত্‌কার : এফ্মে ৯০.৪ ও রকমারি

https://www.facebook.com/rokomari/videos/1379120822189854/?hc_ref=ARS8uz1ebHwdiv5KXHs4Py-0vr3pwwTs7WtcI7EKBkWaPFctv0ja0t-pe7afHgfbHnw
লিঙ্ক

এই মাহবুবকেই তো চেয়েছিলাম : শুভাশিস সিনহা


এই মাহবুবকেই তো চেয়েছিলাম। বলেও ছিলাম, অন্য কিছু, অারও বড় কিছু চাই, তোর কাছ থেকে....
মাহবুবের সে-কথা মনে অাছে কিনা জানি না, অামার অাজকের অাসন্ধ্যারাত্রি এমন সুন্দর যে কাটল, বন্ধু হিসেবে তার ভাগ না নিই কী করে!
এমনই তো হবে অামাদের (অাধা)নাগরিক জীবনের গল্পের ক্লাসিক; নিজের অনুভবের সঙ্গে নিজের মুহুর্মুহু বোঝাপড়া অার সংঘর্ষের সবেগ ন্যারেটিভস, প্রেম-কাম অবসেসনের চোরাবালি, মোহ অার মোহ-ভাঙার বাস্তব, শরীর অার সম্পর্কের দরদী দ্বান্দ্বিকতা, গভীর সংবেদনায় চরিত্রকে ছুঁয়ে দেখা, অসাধারণ ডিটেইলিং, ভালোবাসার নির্মোহ বিন্যাস অার নিরেট কথা ও কাব্যিকতার যুগলচলন, মমতাময় বোঝাপড়ায়।
নুরুন্নাহার-মিলা-মিথিলা-পপি-রোজ কেউ না হোক, শেষত লুৎফুন্নাহারকে ভেবেছিলাম 'ক্রাইম এ্যান্ড পানিশমেন্ট'-এর সোনিয়া হবে, পারল না, এ যে প্রাচ্য, তাই রানাও হতে পারে না রাসকলনিকভ, সোনিয়ার হাতে হাত রেখে দেখবে প্রিয় সুন্দরের মুখ। সর্দারদের এমন নির্মম পরিণতির দেশে পারবেই বা কী করে!
তবু সেই পরাজয়ই তো গাঁথে অামাদের সাহিত্যের সুশোভিত অাত্মাভিমানের চিরপুষ্পমালা।
চিয়ার্স বন্ধু!!
ফেসবুক পোস্ট 

আড় ভাঙার উপন্যাস 'তোমারে চিনি না আমি' : সালাহ উদ্দিন শুভ্র


অনেক দিন পর একটানা কোনও উপন্যাস পড়ে শেষ করলাম। আগে যখন আমার উপন্যাস পড়ার খুব ঝোঁক ছিল, সেই যে স্কুলে থাকতে, তখন উপন্যাস পড়ে যেমন বুঁদ হয়ে থাকতাম। উপন্যাসের কথাগুলো, চরিত্ররা, সংলাপ সারাক্ষণ লেপ্টে থাকত আমার সঙ্গে। আমি বই না-হাতে মনে মনে সেই উপন্যাস নিয়ে ঘুরতাম। খালি মনে হতো কখন গিয়ে পড়ব উপন্যাসটা আবার, শেষে কী আছে, শেষটা কী আগেই পড়ে ফেলব? তাইলে তো সব মজা শেষ। অথবা তর্ক করতাম উপন্যাসে বলা থিওরির সঙ্গে, ঘটনার সঙ্গে, লজিকের সঙ্গে, ফিলসফির সঙ্গে- কিছু মানতাম, কিছু খারিজ করতাম। উপন্যাস পড়ার পর মনে হতো- আমার কিছুটা বয়স বেড়েছে, কিছু পরিবর্তন এসেছে স্বভাবে ও আচরণে। এমন একটা উত্তেজনা নিয়ে অনেক বছর পড়লাম মাহবুব মোর্শেদের নয়া উপন্যাস 'তোমারে চিনি না আমি'।
এই উপন্যাসের মূল চরিত্র এক প্রবল আমি। তার নাম রানা। ঢাকায় একটা এনজিওতে তিনি চাকরি করেন। তার বউয়ের নাম নাজনীন, পরে একটা মেয়ে হয় তাদের, নাম নয়নতারা। রানা প্রচণ্ড অভিমানী, আন্তর্মুখী, গম্ভীর এক চরিত্র। সে মনেপ্রাণে চেয়েছিল কবি হবে অথবা বিপ্লব করবে। কিন্তু কিছুই তার করা হলো না। যেসব মেয়েদের সঙ্গে তার কবিতার, যৌনতার, বিপ্লবের, সমাজ পরিবর্তনের সম্পর্ক ছিল- তারাও তার সঙ্গে আর থাকল না। রানা এক বেতনভুক, গৃহগামী পুরুষে পরিণত হলো। কিন্তু তার ইচ্ছা আর ইতিহাসের চক্র থেকে সে বের হতে পারে না। অতীতের চরিত্রদের সঙ্গে তার যোগাযোগও ঘটে না, ভুলেও থাকতে পারে না।
উপন্যাসের বড় একটা বা বলতে গেলে পুরো অংশটাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে। এখানে রানার সঙ্গে গভীরতা বাড়ে অথবা পরিচয় ঘটে যাদের তারা হলেন সরদার, পপি, রোজ, মিলি, মিথিলা, দীপক, লুৎফুন্নাহার ইত্যাদি। এই লুৎফুন্নাহার রানার প্রথম শিহরণ নুরুন্নাহারের বোন। নুরুন্নাহারকে রানা ছোটবেলায় চুমু খেয়েছিলেন, কিন্তু তারপর হুট করে নুরুন্নাহারেরর বিয়ে হয়ে যায়। এই বিচ্ছেদ রানা মানতে পারে না, এটাও বুঝতে পারে না তার সঙ্গে নুরুন্নাহারের কী ছিল? প্রেম ছিল, না শরীর ছিল। ভালোবাসা ছিল, না কাম ছিল। 'তোমারে চিনি না আমি'- উপন্যাসটি ঘুরেছে-ফিরেছে প্রেম ও শরীরের সন্ধানে।
রানার জীবনে নুরুন্নাহারের পর মিলা ও মিথিলা আসে। রানার কাছে নারীরা শরীরবিনে আসে না, যৌনতা ছাড়া আসে না। এই যৌনতা, প্রেম, সমাজ, সংসার, নৈতিকতাকে জড়িয়ে যে ট্যাবু চলমান; তা ভাঙার, তাকে প্রশ্ন করার একটা প্রয়াস মাহবুব মোর্শেদের নতুন উপন্যাসটি। সরদার, যিনি পরে রানার সঙ্গে যুক্ত হন, তিনি অনেকটা গুরুর ভূমিকায় রানার সামনে আবির্ভূত হন। তার যুক্তি, বিশ্লেষণ, দূরদৃষ্টির মধ্য দিয়ে রানা বুঝতে শুরু করে নতুন অনেক কিছু। শরীর জাগা আর প্রেম জাগা দুটোকে ভিন্ন বিষয় হিসেবে দেখানোর নানা উপায় উপন্যাসটিতে আছে।
যৌনতাকে এত নিবিড়ভাবে, খোলামেলাভাবে, দ্বিধাহীনভাবে বাংলা উপন্যাসে এর আগে নিয়ে আসা হয়েছে কিনা- তা আমার অভিজ্ঞতায় নাই। এই তুলে ধরার সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের এখানে যৌনতাকেন্দ্রিক যে বিধিনিষধে রয়েছে, আড়ষ্টতা রয়েছে, অনেক সংস্কার রয়েছে সেগুলো ভাঙা জরুরি। কারণ এ-সংক্রান্ত অনেক অপরাধ ঘটে। তাছাড়া এখানকার উপন্যাসে যৌনতা যেন নাই মানুষের জীবনে, অথবা থাকলেও তা 'সাহিত্য' করার মধ্য দিয়ে অনেকটাই অযৌনভাবে উপস্থিত থাকে। শরীরে যে কামনা থাকে তা নীতি-নৈতিকতা দ্বারা এমনভাবে শৃঙ্খলিত যে লেখকরাও তার লেখায় আড়ষ্ট থাকেন, লিখবেন কী লিখবেন না এই দ্বিধায় থাকেন। মাহবুব মোর্শেদের 'তোমারে চিনি না আমি' উপন্যাসটি সেই আড় ভেঙে দিয়েছে।

এই উপন্যাস যিনি পড়বেন তার মধ্যে একটা ছাপ তৈরি হবে, চিন্তায় একটা পরিবর্তন আসবে, জীবন-যাপন অনেক হালকা হয়ে আসবে। আমাদের লেখকরা তাদের ঘাড়ে যে অনেক ভূত বয়ে নিয়ে লেখেন, এই উপন্যাসে তার দায় নাই। অনেকটা নির্ভার হয়ে, জীবনের সরল ও গোপন কথাগুলো প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন যারা তারা বুঝবেন, তাদের জীবনের একেবারে সাদামাটা ঘটনা, বাক্য, সংলাপগুলোও উপন্যাসে উঠে আসাটা কতটা তাদেরকে উপন্যাসের সঙ্গে একাত্ম করবে। কিন্তু মাহবুব মোর্শেদ আবার সহজ হলেও অগভীর কিছু লেখেন নাই। তার উপন্যাসের পুরোটাই আধ্যাত্মিক ও গভীর দার্শনিক উপলব্ধিতে তৈরি। তার গদ্যের আঠায় মন মজে যায়, তার ঘটনার বিবরণ থেকে উঠে আসা সহজ হয় না। উঠে আসলেও রেণু রেণু জড়িয়ে থাকে।
নিজের জীবনে যা ঘটে নাই, কষ্ট করে বানিয়ে বানিয়ে লেখার যে কসরত এখানে চলে, সেই ট্যাবুও ভেঙে গেছে এই উপন্যাসে। মিছিলের বিবরণ, গাঁজা খাওয়ার বিবরণ, স্থানের ও ঘুরে বোড়ানোর বিবরণ যদি খোলামেলাভাবে দেওয়া যায়, তাহলে সঙ্গমের বিবরণ কেন দেওয়া যাবে না- সেই প্রশ্নের উত্তরও মিলবে এখানে।
রানা এক প্রেমবঞ্চিত পুরুষ। মিলা ও দীপক তাদের প্রথম সঙ্গমের সময় যে একটা বিদ্যুতের দেখা পেয়েছিল, তারা ভেবেছিল নিজেদের একটা জুটি হিসেবে, সেই ছোঁয়া রানার জীবনে আসেনি। সে এমন বিদ্যুৎ পায়নি। কেন পায়নি? কারণটা ভিন্ন, উপন্যাসের টুইস্টটা এখানে। কারণ রানা এখানে সময়। আমাদের সময় প্রেমহীন, আমাদের সময় অনেকরকম শৃঙ্খলা, নৈতিকতায় আবদ্ধ- রানাও তাই। যে কারণে তার প্রেম হয় না। পরিবারের সঙ্গে তার বনিবনা নাই, কেন নাই তাও পরিষ্কার না। যেন রানা এমনই, অথবা সে নিখাঁদ, প্রেমময় সম্পর্ক চায় তাই এমন। সম্পদের সম্পর্ক নয়। মিলাও তো পরে আর সুখে থাকে নাই, সেও বলে শেষ পর্যন্ত কেউ সুখী হয় না। কবিতা যে লিখত রানা। কবিতায়ও যখন সমাধান পায় না তখন বিপ্লব করতে যায়। সেখানেও হতাশা। সরদারের সঙ্গে রানা অদ্ভূত সুন্দর সব জায়গায় ঘুরে বেড়ায়, লালনের অনুসারীদের কাছে যায়, পদ্মার পাড়ে সবুজ, শ্যামল, সবজির মাচা ঘেরা পুরানা জমিদার বাড়িতে যায়, রোজের সঙ্গে শোয়- এতকিছু সরদারের সঙ্গে, কিন্তু সরদারের সব কথাও রানা শোনে না।
দৈনিক পদ্মায় কবিতা ছাপানোর সুবাদে সরদার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে রানার সঙ্গে দেখা করতে। তারপর তিনি, পপি ও রানা মিলে একটা লিটল ম্যাগ করতে চান, কিন্তু তাও হয় না। একে একে পপি আর রোজও চলে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেড়ে, আসে লুৎফুন্নাহার, নুরুন্নহারের বোন, তার দিকেও আকৃষ্ট হয় রানা। সরদারের ডেরায় যায় তাকে নিয়ে। বড়বোনের পর ছোটবোনের সঙ্গেও তার প্রেম হয়, শরীর জাগে। রানা নিরুপায়, কামকে সে আটকায় না। সরদার তাকে উস্কে দেয়। কিন্তু রানার যৌনতা, সরদারের যৌনতা অভব্যতা নয়। সেটা অজাচার নয়, পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে, পরস্পররে ভালোলাগাকে তারা উপভোগ করেন। সমাজ যে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এসব ক্ষেত্রে রানা তা ভেঙে দিয়েছেন।
যৌনতা আমাদের উপন্যাসে ফ্রয়েড তাড়িত হয়ে এলেও, মাহবুব মোর্শেদ ভিন্নি প্রস্তাবও উপস্থাপন করেছেন। কী সেই আলোচনা আরও বিষদ অন্যত্র করা যাবে।
পুরো উপন্যাসটি এখানে একটা কবিতার মতো, অনেক ভাবাবেগ, অনেক ভাবালুতায় পেয়ে বসবে পাঠককে। প্রকৃতির এমন অপরূপ বর্ণনা আছে যে মনে হবে আহা এমন জায়গায় কেন আমাদের যাওয়া হয় না। ঢাকা শহরের পাঠকদের বিশষত অনেক বন্দী মনে হবে নিজেদের। জীবনের মধ্য বয়সে এসে রানাও যেমন বন্দী। চাকরি করা আর ঘরে ফেরা ছাড়া তার কাজ নাই। অতীত যে গেছে একেবারেই গেছে তার জীবন থেকে। রানার কান্না আসে, দম বন্ধ হয়ে আসে, সংসারও করতে পারে না ঠিকমতো। তার মন পড়ে থাকে অন্য কোথাও, না-হতে পারার যন্ত্রণায় আমাদের সময়টাই যেন রানা। তার মনে অসুখ। কী হওয়ার কথা ছিল অথচ কী হয়ে সে বসে আছে- সম্ভবনারহীত।
গ্লি এরা 

mohammad arju



মাহবুব মোর্শেদ আমাদের লেখক। On the surface, ওনার উপন্যাস 'তোমারে চিনি না আমি' মনে হবে যেন একটা memoir of a 'lost' generation; a story of the pursuit of leisure and happiness into non-conformist sexuality by arguably 'progressive' and politically active youth of the nineties. The protagonists, both females, and males, often make non-compelling arguments about 'emancipating sexuality from love' and the dangers of not doing so.
But, I have tried to explore, to some extents irrational reasons for the novel's appeal. In my reading, on the contrary, this an unsparing novel harsh on love and politics. It's a manifesto for the millennials why they are right about getting rid of sex and getting more into 'immoral' politics. This is a manifesto for our time- our apocalyptic boredom- where sex doesn't make sense anymore.

‌'তোমা‌রে চি‌নি না আমি', আদ‌তে তো চি‌নি! : আলতাফ শাহনেওয়াজ


..............
মাহবুব মোর্শেদ এর অ‌নেক ব্যাপা‌রেই আমার সমা‌লোচনা আছে। তি‌নি উ‌দ্দেশ্যমূলভা‌বে অ‌নেক কিছু ক‌রেন, কিছু দেখনদারীও আছে তাঁর ম‌ধ্যে। এগু‌লো সবই ব্য‌ক্তিগত বিষয়। ত‌বে কথা হ‌লো, লেখক মাহবুব মো‌র্শেদ‌কে পছন্দ ক‌রি সেই 'ব্য‌ক্তিগত বসন্ত‌দিন' থে‌কেই।
‌তি‌নি গল্প লে‌খেন। গল্প বানান না। গল্প লে‌খেন, ব‌লেন এবং তাঁর গ‌ল্পে অবশ্যই গল্প থা‌কে।
এই বই‌মেলায় প্রকা‌শিত তাঁর নতুন উপন্যাস '‌তোমা‌রে চি‌নি না আমি' পড়লাম। পড়‌তে গি‌য়ে ম‌নে হ‌লো, আরে এই উপন্যা‌সের পাত্রপাত্রী আমার চেনা না‌কি! না, পাত্রপাত্রী‌কে মো‌টেই চি‌নি না, কিন্তু তা‌দের স‌ঙ্গে আমি একাত্ম হ‌তে পে‌রে‌ছি, তাদের আমার চেনা ম‌নে হ‌য়ে‌ছে, এ উপাখ্যা‌নে এটা কিন্তু মাহবু‌বেব সাফল্য।
উপন্যা‌সের নায়ক মফস্বল থে‌কে আসা, সে উন্মুল, সে দ্বিধাগ্রস্ত। আমরাও তো তাই। উপন্যা‌সের নায়ক রানা কোথাও দাঁড়া‌তে পা‌রে না। এক সময় বিপ্ল‌বের স্বপ্ন দেখত, এখন ছা পোষা, কিছু ভা‌লো লা‌গে না তার। এই প্রবল পণ্যবাদী, ভোগবাদী সমা‌জে সে একা। সবার ম‌ধ্যে থে‌কেও একা, নি‌জের স‌ঙ্গে থে‌কেও একা। আমা‌দের বাস্তবতাও তাই। ফ‌লে, পড়‌তে পড়‌তে কখ‌নো স‌খো‌নো ম‌নে হ‌য়ে‌ছে, উপন্যা‌সের নায়ক রানা কি আমার ম‌ধ্যে উঁ‌কি দিল।
এখা‌নে সেক্স আছে, ‌বেশ ভা‌লোভা‌বেই আছে। কিন্তু সেটা এ‌সে‌ছে যথাযথ প‌রি‌প্রে‌ক্ষিত অনুযায়ী এবং কখ‌নোই সীমা লঙ্ঘন ক‌রে নয়।
সব মি‌লি‌য়ে উপন্যাস‌টি প‌ড়ে শা‌ন্তি পে‌য়ে‌ছি। কথা ও ক‌বিতার যুগল স্বাদ আছে এ‌তে। আছে নিটল গল্প; আম‌দের ভে‌ঙে যাওয়া সমাজ, ছে‌ড়ে আসা ঘরবা‌ড়ি আর জীব‌নের গল্প।
‌সেই গল্প পড়ার পর ভা‌বি, আমরা কি আদ‌তে সেই আমরা? নি‌জে‌দের আমরা কতটুকু চি‌নি?
'‌তোমা‌রে চি‌নি না আমি' পড়ুন। উপন্যাস‌টি আপনা‌কে স্মৃ‌তিকাতর কর‌বে, ভাবা‌বেও।
এবা‌রের বই‌মেলায় বই‌টি বের ক‌রে‌ছে আদর্শ।
বই‌মেলায় পাওয়া যা‌বে আদর্শ প্রকাশনীর স্ট‌লে।

মাহবুব মোর্শেদের তোমারে চিনি না আমি : মোহাম্মদ আরজু


তোমারে চিনি না আমি/ মাহবুব মোর্শেদ/ প্রকাশক : আদর্শ/ ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/ দাম : ৩৮০ টাকা
প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে, ১৯৭১ সালের বসন্তের তীব্র গরমের মধ্যে যেই দেশে এক নতুন রাষ্ট্রের যাত্রা শুরু হয়, সেই বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর অন্যতম প্রধান দূষিত দেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর একটিতে, ঢাকায়, সম্প্রতি একদিন যখন অফিসমুখো সকালে মানুষ ছুটছে, তখন ধানমন্ডি লেকের পাশে নির্জনতার মধ্যে বসে কাঁদছেন একজন। একজন অফিসযাত্রী কাঁদছেন। বাসার কাছের নিউজস্ট্যান্ড থেকে দিনের সবকয়টা পত্রিকা কিনে নিয়ে এখানে ছুটে এসেছেন তিনি, কাগজগুলো চারপাশে ছড়ায়ে দিনের বড় খবরটি পড়বার চেষ্টা করছেন। মৃতদেহের রক্তাক্ত ছবিটি না হলেও সাদাকালো অস্পষ্ট ছবিটি তিনি চিনতে পারছেন। ‘খুব কাছের কেউ বন্দুকযুদ্ধে মারা গেলে কী ঘটে?’, মাথার মধ্যে প্রশ্ন তার। এই প্রশ্ন মাহবুব মোর্শেদের উপন্যাস ‘তোমারে চিনি না আমি’র।
এই অফিসযাত্রীটির—রানা রহমানের—মাঝবয়সে এসে যিনি সম্প্রতি তার পেশাজীবন, ভালোবাসা, নন-কনফর্মিস্ট যৌনতা এবং ছাত্রজীবনের রাজনীতি-একটিভিজমের মধ্যে খুবই ক্লিশে অর্থে ‘সার্থকতা’ খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন—তার কাছের লোক কেউ আছেন বলে দেখা যায় না। মা-বাবা, পরিবার তো নয়ই, উপন্যাসের যারা নায়ক; লুবনা, লুত্ফুননাহার, নুরুন্নাহার, মিলা, মিথিলা, রোজ, পপি ও নাজনীন—কেউ তার কাছের লোক নয়, হয়ে ওঠেনি। সংসার, শরীর আর প্রেমের মধ্যে ডুবে ডুবে একা একাই এতদূর চলে এসেছেন তিনি। কিন্তু আজ এই অফিসমুখো সকালে টের পাওয়া গেল, ‘সরদার’ তার খুব কাছের লোক ছিলেন।
‘আপনি আমাকে বুঝিয়ে বলতে পারেন, প্রেম আর যৌনতার ভিন্ন ও সম্পর্কহীন দুটো জিনিসকে আমরা কীভাবে অবশ্যসম্পর্কিত করে ফেললাম?’ এই প্রশ্ন রানাকে করতেন যেই সরদার। জগতের সব লোভ পাপ মায়া বাসনার স্পর্শ থেকে দূরের এক জীবন কাটাচ্ছিলেন বলে যিনি মনে করতেন, সেই সরদার। মহানন্দা নদীর তীর ধরে একটি জীবন কাটিয়ে দিতে চাইতেন যিনি, সেই সরদার। সরদার বিশ্বাস করতেন, রানা এই উপন্যাসের কাহিনিকে নিজের জীবনের কাহিনি বানাতে পারতেন, রানা পারতেন নিজের জীবনের প্রটাগনিস্ট হতে। ছাত্ররাজনীতির হৈচৈ ও রাস্তার আন্দোলন না করে বরং রানা লেখক হোক, জীবনের স্বপ্ন দেখাক এই জনপদের মানুষকে, সেইটে চাইতেন সরদার। রানা আজ অফিসে কেন, ধানমন্ডি লেকের এই নির্জনতা ছেড়ে কোথাও যেতে পারবেন না। বন্দুকযুদ্ধে সরদারের মৃত্যুর খবর পড়ার চেষ্টা করছেন রানা। সরদার হতে পারতেন এই উপন্যাসের প্রটাগনিস্ট।
কিন্তু পুরুষের এই দেশে এই উপন্যাসের নায়ক বরং লুবনা, লুত্ফুননাহার, নুরুন্নাহার, মিলা, মিথিলা, রোজ, পপি ও নাজনীন। বিষয়সম্পত্তি অর্জনের চেষ্টার মধ্য দিয়ে; সংস্কৃতিচর্চায়, রাজনীতিতে, ব্যবসায়, করপোরেট অফিসে যেদিকেই যদ্দুর যাওয়া হোক না কেন; শেষ পর্যন্ত সমাজের ‘নৈতিক জীবনে’ আটকে থাকতে হয় যাদের। নাজনীন যেমন বাস করে রানার প্রতিরাতের দুঃস্বপ্নের সাক্ষী হয়ে। তার স্বামী চান না, তাদের বাচ্চা কন্যাসন্তানটি বাবার দুঃস্বপ্নের কথা জানুক। ‘আমি চাই আমার মেয়ে ভীতু হবে না আমার মতো। ও ওর জীবনটা নিজের মতো করে সাজাবে, নিজের মতো চালিয়ে নেবে।’
‘আপনার কি মনে হয়, এ রকম সমাজে আমরা নিজের ইচ্ছামতো সৃজনশীল কাজ করতে পারি?’ এই প্রশ্নটি সরদারের জন্য বরাদ্দ ছিল রানার তরফে। আজ এই সকালে সরদারের নিহত হবার খবর পড়তে পড়তে ‘রাগে-ক্ষোভে বিস্ময়ে’ চিত্কার করতে ইচ্ছে করছে রানার। ততক্ষণে দুজন লোকের একটা জুটি এসে লেকের ধারেই বসল। নিজেদের মধ্যে ডুবে যাবার আগে তারা কিছুক্ষণের জন্য রানার দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করল।
ইত্তেফাক 

নুরুন্নবী শান্ত

মাহবুব মোর্শেদ যখন থেকে লিখছেন তখন থেকেই তার লেখার ভক্ত আমি। বিশেষ করে সেই ইলিয়াসের দোকান থেকে। ফেস বাই ফেস ততটা টানেনি আমায়। এর বাইরে তার প্রায় সব গল্পই কিছু না কিছু চমৎকারিত্ব উপহার দিয়েছে। 'তোমারে চিনি না আমি' পড়ে হিরণ্ময় অনুভূতি হলো। ভাষা তো আছেই, আখ্যানের পরতে পরতে একটা চেনা জীবন আবিষ্কার করে আমি মুগ্ধ। দূর থেকে দেখলাম যেন নিজেরই তারুণ্যের ড্রামাটিক ছায়াছবি। অনেকদিন পর এমন সুখপাঠ্য উপন্যাসের স্বাদ পাওয়া গেলো। সমস্যা হইল, অনেক টাকা খরচ হবে আজকে। কয়েকজনকে উপহার দিতে হবে, যারা কেউ ঢাকায় থাকে না। তাদের এটা পড়া দরকার।

রাজু নুরুল


আমাদের প্রত্যেকেরই বড় হয়ে উঠার একটা গল্প আছে।
মাগরিবের নামাজ পরার জন্য পুকুর ঘাটে অজু করতে বসেছি। আমার পাশেই অজু করছেন আমাদের এক শিক্ষক। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'বড় হয়ে কার মতো হতে চাস?'
এর কিছুদিন আগেই আমি উপস্থিত রচনা লিখে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম হয়েছিলাম। বিষয় ছিল, 'ছোটদের বঙ্গবন্ধু'! ফলে আমি আর সাতপাঁচ না ভেবে বলে দিলাম, 'বঙ্গবন্ধুর মতো হতে চাই।' স্যার আমার কানে-গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছিলাম। আমি সামলাতে না পেরে পুকুরে পড়ে গিয়েছিলাম। আমি আজও জানি না, আমার আপরাধটা কি ছিল?
আমরা জীবনের একেক সময় একেক কিছু হতে চাই।
ছোটবেলার ইচ্ছেগুলো একটু অন্যরকম। অদ্ভুত। কেউ আইসক্রিমওয়ালা, কেউ ট্রাক ড্রাইভার। কিন্তু একটু বড় হলে, যখন বুঝতে শিখি, তখন কিন্তু সত্যিই কিছু একটা হতে চাই। হতে পারি কি শেষমেশ? হওয়া কি এত সহজ? আবার একটা সময় আসে, তখন মনে হয় আর কিছুই হতে ইচ্ছে করে না।
রানা একটা এনজিওতে কাজ করে। স্ত্রী আর এক কন্যা নিয়ে সংসার। এনজিও'র ফান্ড পড়তির দিকে। ফলে কোনমতে হাফ স্যালারি দিয়ে সংসার চালায়। কাজ শেষে কোনমতে শরীরটাকে টেনে নিয়ে বাড়ি ফিরে। তারপর শামুকের মতো গুটিয়ে যায়। কোনও সামাজিকতায় পাওয়া যায় না তাকে। কিন্তু রানাও ফেলে এসেছে টগবগে অতীত।
একটা মফস্বল শহরে বেড়ে উঠেছিল রানা। তারপর রাজশাহী বিশবিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে মাস্টার্স। ছোটবেলায় খালাতো বোনের সাথে প্রেম, চুমু, আদর। তারপর একদিন খালাতো বোনের বিয়ে হয়ে যায়। রানা জানে না, ওটা প্রেম ছিল কীনা!
রানা বড় হতে থাকে। বিতর্ক, আবৃত্তির সাথে যুক্ত হয়। কবিতা পড়ে, লেখে। কবি হতে চায়। তার কবিতা পড়ে সরদার নামের এক রহস্যময় মানুষ তার সাথে দেখা করতে চলে আসে। রানার চিন্তার জগতের মোড় ঘুরে যায়। পরিচিত হতে থাকে নানারকম পাঠের সাথে। সরদার চায় রানা কবি হবে, লিখবে। ওদিকে বিশবিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয় রানা, স্লোগান তোলে। নির্জনতাকে খুন করে রানা তাহলে নেতা হতে চায়? অনিয়ম দেখে তাহলে হাসফাঁস করে কেন?
রানার জীবনের নারীদের সাথে পরিচয় হয় আমাদের।
দীপকের প্রেমিকা মিলার শরীর দেখে লোভ জাগে। মিথিলার প্রেমে পড়ে; অথচ বলা হয়ে উঠেনা। ইউনিভারসিটির সবচেয়ে সুন্দরী; অথচ সিনিয়র রোজ'কে কবিতার জালে পটায়। রোজ একসময় পাশ করে চলে যায়, প্রেমও স্তিমিত হয়ে আসে। রোজে'র বন্ধু পপির সাথে জড়িয়ে যায় কয়েক মাসের জন্য। পপিরও চলে যাওয়ার সময় আসে। রানা'র জীবনে আসে লুৎফুননাহার, তার প্রথম প্রেম নুরুননাহারের ছোট বোন। রানার খালাতো বোন!
আমরা রানা'র জবানিতে, সরদারের মুখে, পপির মননে প্রেম এবং যৌনতার আলাদা অস্তিত্ব নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাই। ধর্মের কিছু অভ্যাস পালন না করাই যে নাস্তিক হয়ে যাওয়া নয়, সেই ব্যাখ্যাও আমরা পাই এই বইয়ে।
গতকাল মাহবুব মোর্শেদ এর লেখা 'তোমারে চিনি না আমি' পড়ার পর থেকে আমার ঘোর এখনো কাটেনি। এই বইয়ের গল্প, ভাষা আর অনবদ্য বর্ণনায় ডুবে বুঁদ হয়ে আছি। মনে হল, বহুদিন বাদে, কেউ আমার গল্প বললো, আমাদের গল্প বললো।
আমরাও এরকম লেখক হতে ছেয়েছিলাম, কেউ কবি, কেউ বিপ্লবী। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নামক এক অবিশ্বাস্য মুক্ত দুনিয়ার চৌকাঠ পেরিয়ে এসেছি। কিছু কি হতে পেরেছি আমরা? আমাদের বুকের ভেতরে ঘুমন্ত সেসব ইচ্ছের কথাগুলো কেউ যেন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মনে করিয়ে দিল। বললো, 'উঠ, এখনো কত কি করার বাকি!'
এই বইয়ের গদ্যের প্রশংসা কিভাবে করবো আমার জানা নাই। একবার মনে হয় জীবনানন্দ পড়ছি, আবার মনে হয়ে সৈয়দ শামসুল হক। এই বইয়ের ভাষা সংগীতের মতো, ধীরে ধীরে শরীরের সমস্ত কোষে, ইন্দ্রিয়ে আরাম দেয়। মনে থাকে না, কতক্ষণ এই আরামের সমুদ্রে ডুবে আছি।
বহুদিন পর কারো বই পড়তে পড়তে এক পলকের জন্যও উঠতে ইচ্ছে করেনি। ঘরে, গাড়িতে, হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে বসে ২০৭ পৃষ্ঠার একটা বই পড়ে শেষ করে ফেলেছি। পড়তে পড়তে ফেলে আসা দিনগুলিতে ফিরে গেছি। চোখের কোণে জল জমেছে, আর বুকে হাহাকার। কি করলেন মাহবুব ভাই?
আদর্শ থেকে বের হওয়া এই বই, বইমেলাতেও পাওয়া যাচ্ছে, দাম ৩৮০ টাকা! পড়তে পারেন।
ফেসবুক পোস্ট 

শেরিফ আল সায়ার


বইমেলা শেষ হয়ে আসছে। এবারের মেলায় খুব বেছে বেছে বই কিনেছি। এখন পর্যন্ত পড়া শেষ করেছি বেশ কয়েকটি বই।
প্রথমত, সুমন রহমানের ‘নিরপরাধ ঘুম’। আমার কাছে মনে হয়েছে বর্তমান সময়ে দুর্দান্ত গল্প বলতে পারার ক্ষমতা রাখেন সুমন রহমান। আমরা যে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি সেই সময়ের গল্প কতটা অসাধারণভাবে বলা যায় তা ‘নিরপরাধ ঘুম’ পড়লেই বোঝা যায়। সত্যিকার অর্থে এই বইটি আমাকে মুগ্ধ করেছে। (Sumon Rahman)
দ্বিতীয়, মোশাহিদা সুলতানা ঋতুর ‘বড়ো শহরের ছোট গল্প’। তার গল্পও সাবলীল ভাষায় চমৎকার লেগেছে। (Moshahida Sultana)
তৃতীয়, মাহবুব মোর্শেদের উপন্যাস ‘তোমারে চিনি না আমি’। মাহবুব মোর্শেদের এই উপন্যাস এক নিশ্বাসে পড়ার মতো উপন্যাস। এই উপন্যাস একটি ভিন্ন আঙ্গিকের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর বেড়ে ওঠা এই উপন্যাসের চরিত্রগুলো নতুন প্রেক্ষাপট হাজির করেছে পাঠকের সামনে। (মাহবুব মোর্শেদ)
চতুর্থ, স্বকৃত নোমানের গল্পগ্রন্থ ‘ইবিকাসের বংশধর’। স্বকৃত নোমানের ছোটগল্প আগে পড়া হয়নি। এবারই প্রথম পড়লাম। আমার কাছে ভালো লেগেছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটা চিত্র পাওয়া যায় তার গল্পে। Swakrito Noman
পঞ্চম, হামিম কামালের ‘কারখানার বাঁশি’। হামিমের লেখার স্টাইল বর্তমান সময়ে অনেক ভিন্ন। বাক্য গঠনে প্রচুর সময় দেন হামিম, আমার কাছে পড়ে তাই মনে হয়েছে। এই উপন্যাস সময় নিয়ে পড়তে হবে। আমি শুরু করেছিলাম। ১৪ পাতা পর্যন্ত পড়ে বন্ধ রেখেছি। এটা শেষ করবো আরেকটু সময় নিয়ে। হামিমের বাক্য গঠনের এই স্টাইল নিয়ে আমি একটা আলোচনামূলক লেখা লিখতে চাই। এজন্য। হামিম কামাল
ষষ্ঠ, রেজানুর রহমানের উপন্যাস ‘মায়া’। আমি পড়ছি এখন। শেষের পর্যায়ে আছি। সাবলীল ভাষায় একটানে গল্প বলতে পারেন রেজানুর রহমান।
লিস্টে আছে আরও বই: (একে একে পড়বো)
১. নিরুদ্দেশ যাত্রা, আহমাদ মোস্তফা কামাল Ahmad Mostofa Kamal
২. আশীফ এন্তাজ রবি, চন্দ্রমুখী।
৩. অঘোর ছায়া, মাহবুব হাসান জ্যোতি Mahbub Hassan Joti
৪. বীরাঙ্গনার জীবনযুদ্ধ, উদিসা ইসলাম Udisa Emon
৫. অসুখী দিন, শাহীন আখতার
৬. ক্রশপথে নিখোঁজ গল্প, মাহবুব ময়ূখ রিশাদ Mahbub Mayukh Rishad
৭. কয়েকজন বোকা মানুষ ও কাঠগোলাপের পৃথিবী, শারমিন শামস Moonmoon Sharmin Shams
এখানে মূলত উদিসা ইসলামের বই ছাড়া বাকিগুলো গল্প-উপন্যাস বইগুলোর নাম লিখলাম। প্রবন্ধের বইও আছে লিস্টে। সেগুলো পরে একদিন হবে।
ফেসবুক পোস্ট 

আহসান উল্লাহ্



Mridul Mahbub এর "ঊনমানুষের ভাষা " এবং মাহবুব মোর্শেদ এর "তোমারে চিনিনা আমি " পড়তে চাই। বাংলা সাহিত্যে এ দুজন বেশ নিজস্বতা নিয়া লিখতে পারতেসে।

কে কারে চেনে না! : ওয়াহেদ সুজন




তোমারে চিনি না আমি। ‘তুমি’ কে? আর ‘আমি’? তুমি আর আমি কি একজন? নিজের সম্পর্কে বলা? নিজেকে ‘অপর’ করে দিয়ে চেনার তারিকা মন্দ না। প্রশ্ন হতে পারে ‘আমি’র গোলকধাঁধা থেকে মানুষ বেরুতে পারে কি-না। অন্তত ব্যক্তি মানুষ সর্বস্ব হয়ে উঠার এ জগতে নিজেকে বিচার করার ক্ষেত্রে। নাকি, ‘আমি’ ও ‘তুমি’ কোনো এক পরম জগতে এক হয়ে বসত করে? তাকেই তালাশ করা হচ্ছে।
বেশ স্বাদু গদ্যে মাহবুব মোর্শেদ উপন্যাসটি লিখেছেন। টানা পড়া যায়। অস্বস্তিরও কারণ হতে পারে। আকর্ষণ ধরে রাখতে পারার গুণকে ভালো উপন্যাস বলে মানবেন তো সবাই?
উপন্যাসের মূল চরিত্র রানা রহমান নিজের কথা বলা গেছেন। নিজেকে নানা ঘটনা ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সমেত খোলাসা করেছেন। আর রানাকে আমরা সনাক্ত করি বিবিধ চাওয়া-পাওয়ার হিসেব মেলানোর ভেতর।
অন্য চরিত্রগুলো আসছে রানার চোখ দিয়ে। খুব বেশি ডিটেইলস আসে নাই সেই সব চরিত্রের— সঙ্গত কারণে। ফলত বিপুলা পৃথিবী রহস্য হয়ে হাজির থাকে। সে রহস্য খণ্ডিত হয় আবার হয়ও না। আবার সেই পৃথিবীতে জীবন রহস্য রানার সম্মুখে ফর্সা হতে থাকে। রানা যেন তা মানতে চায় না, আবার মেনে নিয়েও থাকে। শুধু ‘নিজের’ কাছে ফেরা হয় না আর! কী সেই ‘নিজে’?
জীবনকে যে অর্থের ভেতর প্রাচুর্যময় করে তুলতে হয়, তা অধরা থেকে যায়। রানা যদি অসংখ্য ব্যক্তি মানুষের একটা উদাহরণ হন। এজমালি অর্থে একটা অর্থহীনতার ভেতর আমরা খাবি খাই। সে যাতনা তারও।
রানার গল্পটা যুথবদ্ধতার মধ্যে নিজেরে খুঁজে ফেরা। ব্যক্তির অর্থপূর্ণতা অপরের সঙ্গে মিলেমিশে। বৃহত্তর জনমণ্ডলীর মাঝে নিজেরে আবিষ্কারে। জগতে অর্থপূর্ণভাবে অস্তিত্ববান হওয়া। যেটা দুই নর-নারীর প্রেমের মধ্য দিয়ে সম্ভব হতে পারে বলে মনে করে রানা। সে কী, কী হতে চায়, এ হতে চাওয়ায় পরিপূরক হিসেবে কেউ একজন আসবে— যারে বিদ্যুৎ চমকের মতো আবিস্কার করা যায় আলিঙ্গনে, চুম্বনে, যৌনতায়। এখানে স্থির হতে চেয়েছিল রানা। তার অর্থপূর্ণতার মানকাঠিও এই। মাঝে এসেছিল কবিতা ও রাজনীতি। তার সব-ই যেন টেনে নিয়ে গেছে এই লক্ষ্যে। অথবা নিজেকে চিনতে না পারার বেদনায় রক্তিম করে আরো।
যৌনতার বেশ আনাগোনা এ উপন্যাসে আছে। যৌনতা বিষয়ক নৈতিক অবস্থানকে টলিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবনাও আছে। উপন্যাসের কোনো চরিত্র টলিয়ে দেওয়ায় আপত্তিও করে না জোরালোভাবে। এটা নিয়া বইটার আলোচনায় কথা হচ্ছে অল্পবিস্তুর। কিন্তু শুধু যৌনতার আকর্ষণে উপন্যাসটা পড়ার কোনো ঘটনা আছে বলে মনে হয় না। বরং, ঘটনা রানাকে কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে— সেদিকে টানবে। সেই জিজ্ঞাসা ও কৌতুহলকে উস্কে রাখাকে লেখকের মুন্সিয়ানা বলতে হয়।
গল্প বলার ঢংটি দারুণ আকর্ষণীয়। আর মূল চরিত্রের জিজ্ঞাসাগুলোকেও আপন করে নিতে পারে পাঠক। কোনো কোনো অংশে মনে হতে পারে নিজের গল্পটাই পড়ছেন তিনি। আর স্রেফ গল্প বলে যাওয়ার চেয়ে আরো কিছু ব্যাপার আছে ‘তোমারে চিনি না আমি’তে। উপলব্ধি, জিজ্ঞাসা, দর্শন ভাষা পায় সাবলীলভাবে। আছে নাড়া দেওয়ার মতো প্রকৃতির বর্ণনা। আছে সমসাময়িকতাকে যাপনের চিহ্ন।
আগেই বলেছিলাম রানা ভিন্ন অন্য চরিত্রগুলোর তেমন ব্যবচ্ছেদ নাই। এমনকি দুনিয়াদারিরও। যে অর্থে বিষয়গতভাবে ভাবা যায়। মানে লেখক সর্বেসর্বা হয়ে কুটাকুটি করেন যেভাবে। চলমান ঘটনার বিরতিতে মাঝে মাঝে কথপোকথনের কিছু দৃশ্য কল্পনার মাধ্যমে চরিত্রগুলোর সঙ্গে বোঝাপড়া করেন। এ বোঝাপড়া অপরের সাথে নিজেকে বোঝার, আবিষ্কারের। আবার সেই আপনাকেই অপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও নিজের মধ্যে ধারণ না করেও বইতে হয়। তাই পাওয়া না পাওয়ার প্রশ্নগুলোও মেলাতে হয় যেন অন্যের উত্তরের ভেতর। এটাই কি জীবনের প্রবাহমানতা? এর মাঝেই কি না পাওয়া উত্তর?
এ উপন্যাসের ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার সরদার। রহস্যময় এক ব্যক্তি। উপন্যাসটা যখন একঘেয়ে হয়ে যাবে যাবে পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল তখন সরদার হাজির হয়ে বাঁক বদল করে দেন। এমন ধাক্কা আমাদের জীবনে কোনো না কোনোভাবে ঘটনা হয়ে দাঁড়ায় হয়তো। সরদারের উপস্থিতি-অনুপস্থিতি উপন্যাসের চরিত্রের পাশাপাশি পাঠককেও ভাববার সুযোগ করে দেয়। এ যেন রানার আত্মার ভেতর থেকে উচ্চারণ। কে তাকে ছুঁতে পারে যথা সময়ে? হয়তো ‘তোমারে চিনি না আমি’ সরদারকে উদ্দেশ্য করে বলা। যা আবার প্রতিধ্বনি হয়ে রানার দিকেই ফিরে আসে। যেখাবে ‘আমি’ আর ‘তুমি’ বিলীন হয়ে যায়।
সরদারের প্রণোদনায় কবিত্ব দারুণভাবে উপভোগ করতে পারেন রানা। হঠাৎ ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়াকেও উপভোগ করেন। জগত ও জীবনকে সামগ্রিকভাবে দেখার কোনো আকাঙ্খা থাকে না তার। এর মধ্য দিয়ে সচরাচর ‘প্রগতিশীল’ বলে যে রাজনীতি ট্যাবু হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত তার ক্রিটিক আছে। লক্ষ্যহীন কবিত্বেরও। কৌতুহলজনকভাবে ইসলামি ছাত্র শিবির প্রসঙ্গ খানিকটা আছে— আরো জানতেও ইচ্ছে করে তাদের প্রসঙ্গে, যারা আমাদের সাহিত্যে অচ্ছুত। তেমনি বামপন্থী প্রসঙ্গগুলোও। সমসাময়িক চিত্রগুলা আমাদের উপন্যাসে উঠে আসা দরকার। অল্প বিস্তুর যা আছে- তার জন্য সাধুবাদ।
উপন্যাসটা পড়তে পড়তে পাঠকের আত্মোপলব্ধি হতে পারে। যেহেতু তার সময়টাকেই উদযাপন করা হচ্ছে। মনে হতে পারে, বিষয়টা রানার মুর্হূতিক আকাঙ্খা বা বোঝাপড়া নয়— বরং জীবনকে বৃহত্তর অর্থে দেখতে না পারার সংকট। এ সংকট বা স্থবিরতা সমকালীন বাংলাদেশে আমাদেরও নয়?
নিজেকে বিচ্ছিন্ন সত্তা আকারে জগতকে পেছনে রাখার সংকট বিদ্যমান। যে কারণে তার কবিত্ব বা রাজনীতি বড় কোনো স্বপ্ন তৈরি করে না। রানা যেন আত্মাহীনভাবে বসত করেন। সেই সংকট মাহবুব মোর্শেদ কতটা আঁকতে পেরেছেন ভাবার বিষয় বটেও! আরো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখার বাসনাও তৈরি করে। কথা বলতে ইচ্ছে করে বাকি চরিত্রগুলো ধরে ধরে।
রানার বেড়ে ওঠা, বিশ্ববিদ্যালয়, তার মাঝে বুনে দেওয়া আকাঙ্খা, সেখান থেকে বের হতে চাওয়া বা না চাওয়া, নিস্ক্রিয় যাপনের ভেতর নিজেকে ইহলৌকিকতার মধ্যে ফয়সালার একটা প্রয়াস হিসেবে ‘তোমারে চিনি না আমি’ অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ। সেই গুরুত্ব ফুলে-ফলে বেড়ে উঠুক। আমার এই চাওয়া চিনতে পেরেছি পঠন শেষে। প্রশংসা করি পাঠকের!
তোমারে চিনি না আমি । মাহবুব মোর্শেদ । প্রকাশক আদর্শ । ফেব্রুয়ারি ২০১৮ । মূল্য ৩৮০ টাকা
ব্লগ
যুগান্তর সাময়িকী 

সাবিদিন ইব্রাহিম



মেলাতে আজকে দুটি উপন্যাস কিনলাম! মাহবুব মোর্শেদ এর "তোমারে চিনি না আমি" (আদর্শ) এবং Alim Azijএর 'কালো হরফের অশ্বারোহী' (আলোঘর প্রকাশনা)!
মাহবুব ভাইয়ের অটোগ্রাফসহ নিলাম! আমাদের সময়ের গুরুত্বপূর্ণ লেখক! আমার দুজন প্রিয় লেখক!
পড়ে মন্তব্য জানাবো!
ফেসবুক পোস্ট 

আমিও এমন ভাবেই জবাব দিতাম : রেজাউল করিম রনি

ফেসবুক পোস্ট
আমিও এমন ভাবেই জবাব দিতাম- কবিতা ও বিরহ ব্যাপরটা নিয়া, আজ সাক্ষী পাইলাম :)
“কবিতার শক্তিটা আপনি অনুভব করতে পারেননি। যখন পারবেন, তখন বিরহ জিনিসটাই আপনার অচেনা লাগবে। অপ্রাপ্তি, বিরহ, বেদনা জীবনে তো থাকবেই। এগুলোকে মানুষ মধুর অভিজ্ঞতা বলেই জানে। এই মধুরতা কিন্তু মিথ্যা। রহস্য খোলার রেঞ্চ যাদের হাতে থাকে না, তারা প্রথমে আঘাত পায়। পরে যখন সফল হয়, পুরোনো আঘাতটাকে আর আঘাত মনে হয় না। অভিজ্ঞতা মনে হয়। আগের আঘাত ও বেদনাকে রহস্যাবৃত করে সবার সামনে পরিবেশন করে লোকে। কবিতা লেখার জন্য বিরহ লাগবে বলে কেউ নিশ্চয়ই যেচে গিয়ে আঘাত পেতে চাইবে না। তাই না?”
-‘তোমারে চিনি না আমি’ মাহবুব মোর্শেদ ভাই এর উপন্যাস থেকে।
(পৃষ্ঠা- ৮৫, প্রকাশক : আদর্শ)

অবশেষে বইগুলি হাতে পেলাম........ : দেলওয়ার আহমেদ



'মাহবুব মোর্শেদ'-এর 'তোমারে চিনিনা আমি' উপন্যাস দিয়ে পড়া শুরু করলাম অবশ্য আগে থেকেই নির্বাচিত করা যে, এই বইটি দিয়ে পড়া শুরু করবো! এই বইয়ের লেখক 'মাহবুব মোর্শেদ' সাহেব যে আমার খুব প্রিয় বা পরিচিত কেউ তা না! কোনো একদিন 'তোমারে চিনিনা আমি' বইটি নিয়ে কেউ একজন একটা রিভিউ করে এবং তা আমার দৃষ্টিগোচর হয় সেই থেকে লোভ জাগে বইটি আমাকে পড়তেই হবে!
আমি যে অধীর আগ্রহে বইটি পার্সেল যুগে 'বই মেলা ২০১৮ ইং' হতে প্যারিস ফ্রান্সে আনতে যে সংগ্রামের স্বীকার হই তা কিন্তু একদমই বিফলে যাওয়ার না! কেবল মাত্র শুরু করলাম পড়া এবং বইটি শুরুতেই জানান দিয়ে যায়- বইটি পড়ে আমার তৃপ্তি মিটবে!
বই মেলা ২০১৮ ইং-য়ে ফেবু ফ্রেন্ড থেকে শুরু করে অনেক প্রিয় জনের'ই বই প্রকাশ হয় এবারের বই মেলায় কিন্তু তার মধ্যে 'তোমারে চিনিনা আমি' আমার চাহিদার শীর্ষে! যদিও বর্তমান সাড়া জাগানো লেখক 'সাদাত হোসাইন'-এর 'নিঃসঙ্গ নক্ষত্র' বইটি আনতে ভুলিনি! সাথে আছে 'মাস্টার দা নাইম'-এর '১৪১৩ টুকরো একটি লাশ'!
বাই দ্যা উয়ে, 'তোমারে চিনিনা আমি' বইটি পড়ে পাঠকের চাহিদা মিটবে যার খাতিরে লেখক পাঠকের মনে জায়গা করে নিবেন যেমন'টা আমার বেলায় হয়েছে! লেখক সহ প্রিয় বইটির প্রতি শুভ কামনা রইলো বইটি যেন পাঠকের হৃদয়ে প্রথম স্থান জুড়ে নেয়!
বর্তমান সাড়া জাগানো 'সাদাত হোসাইন'-এর প্রতিও শুভ কামনা এবং নব্য লেখক 'মাস্টার দা নাইম'-এর '১৪১৩ টুকরো একটি লাশ' টি বই প্রেমিরা একটিবার হলেও যেন দেখেন!
আপনাদের মতো লেখক'রা আছেন বিধায় বই এখনো সবার চাহিদার শীর্ষে! বই এবং লেখকের প্রতি বরাবরের মতো ভালবাসা রইলো!
ফেসবুক পোস্ট

ফ্যাসিবাদের দিনে বই পড়াপড়ি : রিফাত হাসান



মেলা তো শেষ হবে। এলা বইটই নিয়া একটু আরামসে কথা কওন যায়। আমি পাঠক হিশেবে অলস। এই বছর যে বইগুলো নিয়া আগ্রহ তৈরী হইছে, সামনে পাইলেই কেনা হবে, তার একটা হদিস দিই। প্রায় সবাই বন্ধু বান্ধব। গদ্যের কথা বলি। মাহবুব মোর্শেদের ভাষা ও উইট আমার পছন্দ। ভাষা টানলেও, তার কোন উপন্যাস পড়া হয় নাই আগে। তোমারে চিনি না আমি তাই কেনার তালিকায় রইল। ইমরুল হাসানের রুমি কাহিনী হাতে পাওয়ার জন্য আমি অপেক্ষায় আছি। ইমরুলের গদ্য আর রুমি মিলে এইটা সুখপাঠ্য হবে বইলা আমার বিশ্বাস। সুমন রহমানের গল্পের বই, নিরাপরাধ ঘুম কিনব। সুমনের কবিতা টানটান, গল্প তেমন কইরা পড়া হয়ে ওঠে নাই। বই হাতে পাইলে পড়া হবে এইবার। ফরহাদ মজহার, উনিও বন্ধু বটেন। ফরহাদের মার্কস, ফুকো ও রুহানিয়াত কিনব। নীরবতা ও ট্রমার সময়গুলোতে তিনি আমাদেরে লেখালেখি উপহার দিচ্ছেন, এইটা ভাল খবর। গৌতম দাসের চীন ও নেপাল নিয়া দুটি বই একাদেমিয়া প্রকাশ করছে। নয়া বিশ্বরাজনীতি নিয়া গৌতমের ভাবনাগুলো ইন্টারেস্টিং। পিনাকী ভট্টাচার্যের মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম বইটি বিষয়ের কারণেই একটি বাঁধভাঙ্গা ব্যাপার। এইটা কয়েকবার হাতের কাছে পেয়েও পড়া হয় নাই, কারণ পিনাকীর ভক্ত বেশি। উনারা নিয়ে যান। সোহেল হাসান গালিবের বাদ মাগরিব নামটা অভিনব। কেনা হবে। কামরুজ্জামান কামুর কিছু কবিতা পড়ে পছন্দ হইছে। আমি রোহিঙ্গা, বাতিঘরের প্রকাশ। কিনব। কামুর কি কোন সমগ্র আছে? কাজল শাহনেওয়াজের শ্রেষ্ঠ কবিতা হাতে পাওয়া এক ধরণের সৌভাগ্যই। কিনব। তানিমের কেটে যাচ্ছে মালিহা জেরিন। কিনব। সুব্রত গোমেজের কবিতা পইড়া দেখার এরাদা আছে। সমগ্র বের হইছে না? কেনা হবে। ও, ফরহাদের কবিতার বই সদরুদ্দিনও, কেনা হবে। মজনু শাহর বই বেরুল না? অইটাও, কিনব। হাসান রোবায়েত, কবিতায় ভাল এক্সপেরিমেন্ট করছেন শব্দ ও ফর্ম নিয়া। একটা কবিতা পইড়া মনে হল। তো, এক্সপেরিমেন্টের দিনগুলো পেরুলে এক সময় ভাল কবিতা হবে বইলা আমার বিশ্বাস। রোবায়েতের বই কিনব। রোবায়েতের মতই আরো আরো আছেন। তাই, বইয়ের নাম আরো আরো হইতে পারে। ও, ব্রাত্য রাইসুর স্যানাটোরিয়াম প্রিঅর্ডার করছিলাম গত বছর। এই বছরও আশা করি পাবো না। অতনু সিংহর বই বের হইছে, ঘুমের চেয়ে প্রাথনা প্রিয়। কিনব। এইসব বই যদি একটাও কেনা না হয়, আমি অন্তত একবার এদেরে কিনবো বইলা ভাবছিলাম। এইটা তো গুরুত্বপূর্ণই। ফ্যাসিবাদের দিনে আলাদা কইরা কবিতা সাহিত্য ও গান বইলা মহত্তর কিছুর অস্তিত্ব নেই। সবই মৃত গণ্ডারের চোখের মত, ফ্যাসিবাদের টুলস হিশেবে ব্যবহৃত হয়। তাই, মনে করিয়ে দেওয়া ভাল, আমরা ফ্যাসিবাদের ভেতরে আছি। তার টুলস হিশেবেও। তাই, নিজেরে বিচার করতে করতে পড়া ভাল। নিজের বিচাররেও।
ফেসবুক পোস্ট 

মাহবুব মোর্শেদের উপন্যাস- তোমারে চিনি না আমি : কাজী আশরাফ


মধ্যবিত্ত নিয়ে লেখা উপন্যাস ইদানিং আমার ভালো লাগে না। মাহবুব মোর্শেদের আগের উপন্যাস 'ফেস বাই ফেস' পিডিএফ আছে, কিছুদূর পড়েছিলাম। এবারের উপন্যাসটা এইমাত্র পড়ে উঠলাম। শুধু একটি কারণে এখানে মন্তব্য লিখছি।
একসময় অবুঝের মতোই বলা চলে উত্তর আধুনিকতা চর্চা করতাম। কেন্দ্র ভেঙে নতুন, ছোট ছোট কেন্দ্র নির্মাণের পক্ষে বলতাম। এখনো তাই চাই। বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের উপন্যাস এখনো ঢাকাকেন্দ্রিক। পঞ্চাশের কথাসাহিত্যিকদের অনেকে আমার জন্মের বহু আগেই প্রয়াস চালিয়েছিলেন চিটাগাংের এবং অন্য শহরের মধ্যবিত্তকে তুলে ধরার। আলাউদ্দিন আল আজাদের লেখায় তা পেয়েছিলাম। সুদূর করাচির বাঙালি মধ্যবিত্তকেও তুলে ধরেছিলেন সৈয়দ শামসুল হক, রাজিয়া খান এবং আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন প্রমুখ। ১৯৭১ এর পরে ভাঙন কমেছে, ঢাকার শক্তি বেড়েছে। গ্রামজীবন নিয়ে হাসান আজিজুল হক, আবু বকর সিদ্দিক, মঞ্জু সরকার, জাকির তালুকদার, মামুন হুসাইন, মনিরা কায়েস ভালো লিখেছেন। কিন্তু উপন্যাসে নাগরিক মধ্যবিত্ত ঢাকার কেন্দ্র থেকে বের হতে পারেনি।
মাসখানেক আগে নিরমিন শিমেলের উপন্যাস 'মেঘবলাকা' আমার সামনে সেই ভাঙনের দেয়ালের ফাঁকটা দেখিয়ে দিয়েছে।
মাহবুব মোর্শেদের 'তোমারে চিনি না আমি' উপন্যাসের পটভূমিও শিমেলের মতোই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী মহানগরকেন্দ্রিক। যদিও উত্তরের এই বড় শহরটি সম্পূর্ণভাবে উঠে আসেনি। ভার্সিটি এরিয়া, ছাত্রাবাসকেন্দ্রিক জীবনের বর্ণনার কারণে। আমি খুলনা, ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেটকেন্দ্রিক অনেক উপন্যাস আশা করি। এই শহরগুলো এবং তাদের অধিবাসীদের জানতে চাই। ময়মনসিংহ হুমায়ূন আহমেদের লেখায় কিছু পেতাম। কাশেম বিন আবুবকরের শ্রেণীর কিছু লেখক এক সময় এই কাজটি করতে চেয়েছিলেন। 'রিকশাওয়ালা' নামের উপন্যাস পড়েছিলাম সেইযুগের বরিশালশহরকেন্দ্রিক।
মাহবুব মোর্শেদ আমার কিছুটা আশা পূরণ করেছে।
১. যদিও উত্তম পুরুষে রানা রহমান ঢাকা থেকে আত্মকাহিনি শুরু এবং শেষ করেছে।
২. উপন্যাসটি আত্মজৈবনিক ধারার।
৩. ব্যক্তিজীবনের প্রেম ও যৌনতা সেন্সর করে নান্দনিক করে তোলার চেয়ে বাস্তবতার বিরাট দাবিই লেখক পূরণ করেছেন।
৪. বিচ্ছিন্নতাবাদ রানার জীবনে সবচেয়ে বড়। বিচ্ছিন্নতাবোধই তাকে নারীর কাছে নিয়ে যায়। বুদ্ধদেব বসুর জীবন ও তার উপন্যাসে এ বিষয়টা ছিল।
৫. সমকালীন রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি স্প্যাচুলা দিয়ে বড় বড় স্ট্রোকে না এঁকে চিকন তুলিতে ধারণ করে লেখক নিজের অবস্থান সংহত করেছেন।
৬. বয়স ও পরিপার্শ্ব মানুষের বিশ্বাস ও চিন্তায় পরিবর্তন ঘটায়, যেমন রানা- নাজনীনের দাম্পত্যজীবন।
৭. সরদারের মতো চরিত্রই উপন্যাসটির যকৃৎহিসাবে অবস্থান করছে। সরদার ছাড়া এটি উপন্যাসই হতো না।
৮. সরদারকে মনে হয়েছে শরৎচন্দ্রের 'পথের দাবী'র ডাক্তার সব্যসাচী। সব্যসাচী তার লেখকের রক্ষণশীলতা ধারণ করে, রিয়ালিজমের বাইরে গিয়ে আইডিয়ালিজমের রাজ্যে সুভাষ বসুকে অনুসরণ করেছে। কিন্তু সরদার সমকালীন রুচিবোধ নিয়ে তার লেখকের চিন্তাকে অনুসরণ করেছে।
৯. সরদারের মৃত্যুও ঠিক আছে বলে মনে হয়।
১০. মাহবুব মোর্শেদ তার এই উপন্যাসে দরজা জানালা খুলে পর্দা তুলে প্রচুর আলো বাতাসের প্রবেশের পথ খুলে দিয়েছেন।
নতুন যুগের পাঠকদের জন্যই এই উপন্যাস। পুরনোরা ধাক্কা খেতে পারেন।
তবু একটা নতুন কিছু।

ফেসবুক পোস্ট